ইডেন কলেজের ছাত্রীকে স্টাম্প দিয়ে পেটানো রোকসানা কথার আগে হাত চালান
রাজধানীর ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে স্টাম্প দিয়ে পেটানো ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানা আগে থেকেই নানা অপকর্মে জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা জানান। তিনি বেশ কিছু ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় মারধর করেছেন। আবার ছাত্রলীগের সিনিয়র নেত্রীদের মারও খেয়েছেন অনেকবার।
অভিযোগ রয়েছে, ওই নেত্রী অবৈধভাবে হলের কক্ষ দখল, সাধারণ শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অবৈধভাবে বহিরাগত মেয়েদের দিয়ে সিট দখল করান। তিনি অশ্নীল ভাষায় গালাগাল, জিনিসপত্র ভাঙচুর, মেয়েদের জোর করে রাজনীতিতে জড়ানো, আপত্তিকর ছবি তোলা ও বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীদের নাজেহাল করেন।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের বিষয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে জান্নাতুল ফেরদৌসী নামের ছাত্রলীগের এক সহসভাপতিকে মারধর করেন রোকসানা। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন নেত্রীও ছিলেন।
গণিত বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী রোকসানা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের ওই ছাত্রীকে মঙ্গলবার মারধরের পর তাঁর চুল টেনে ছিঁড়েন এবং বঁটি নিয়ে ধাওয়া করেন। তবে এ ঘটনায় হল প্রশাসন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি; বরং ভুক্তভোগীকে আপস করতে বাধ্য করে।
এর আগে গত বছরের গত ১০ এপ্রিল বঙ্গমাতা হলের একটি কক্ষের সিট দখল করার জন্য রোকসানা ও তার অনুসারীরা সেখানকার বৈধ ছাত্রীদের ওপর হামলা করেন। এ ঘটনায় তাঁকে হল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্তও নিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি এখনও বহাল তবিয়তে আছেন।
কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গমাতা হলের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে প্রত্যেক সাধারণ ছাত্রীই তাঁর উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য সব সময় ভীত থাকেন। কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রী বলেন, রোকসানা শুরু থেকেই বেপরোয়া এবং উচ্ছৃঙ্খল। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য থাকাকালে তিনি তাঁর উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে প্রায় সব নেত্রীর মার খেয়েছেন। এরপরও তিনি শোধরাননি। তাঁকে কোনো পদ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হলেও কোনো এক অজানা কারণে তার উল্টোটা ঘটে। এরপর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তবে রোকসানা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কাঠগড়ায় হল প্রশাসন :শিক্ষার্থীকে স্টাম্প দিয়ে পেটানোর ঘটনায় হল সুপার নাজমুন নাহারকে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। তাঁকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দেওয়ার সময়ের ২১ মিনিটের একটি অডিও এসেছে সমকালের হাতে।
অডিওতে হল সুপারকে বলতে শোনা যায়, ‘এ অভিযোগপত্র কে লিখেছে? খাতার মার্জিন দাওনি কেন? এত ভুল কেন?’ হল সুপারকে অভিযোগের প্রতিটি লাইন পড়ে পড়ে ভুল ধরতে শোনা যায়। এ সময় তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধমকও দেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তখন কাঁদতে কাঁদতে হল সুপারকে বলেন, ‘ম্যাম, আমাকে স্টাম্প দিয়ে মারছে; বঁটি দিয়ে মারতে আসছে।’ পরে এক নেত্রী রুমে প্রবেশ করে সব শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
ওই নেত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘যার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে, শুধু সে থাকবে। বাকি সবাই বের হয়ে যাও।’ এরপর ওই রুমে আরও কয়েকজন নেত্রী ঢুকে হল সুপারের সামনেই শিক্ষার্থীদের ধমকাতে থাকেন। তাঁরা বকাবকি করে সব শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের করে দেন।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য ও উপাধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
মারামারিসহ বিভিন্ন কারণে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ মাঝেমধ্যেই খবরের শিরোনাম হয়। গত বছরের আগস্টে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার একটি অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে তাঁকে কলেজের চার ছাত্রীকে হুমকি-ধমকি এবং গালাগাল করতে শোনা যায়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর রুমে ডেকে নিয়ে দুই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।
পরদিন দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির জেরে কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত এবং ১৬ নেতাকর্মীকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়া উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। এরপর নানা নাটকীয়তার পর কমিটি পুনর্বহাল এবং বহিস্কৃতদের ক্ষমা করা হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয় পক্ষকে ডেকে সমঝোতা করিয়ে দেয়। সূত্র: সমকাল