১১ বছরেও বিচার পাইনি, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সাগর-রুনি হত্যার বিচার সম্ভব নয়
সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার বিচার সম্ভব নয় জানিয়ে রুনির ভাই নওশের রোমান বলেছেন, তদন্তে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি নেই। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া এ হত্যার বিচার সম্ভব নয়। ১১ বছরেও যেহেতু বিচার পাইনি, তাই আমরা বিচার চাইতেও এখন লজ্জা পাই। বিচার চাইবো কার কাছে।
হত্যার বিচার দাবিতে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আয়োজিত দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এবার এ হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য অভিনবভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তাদের পরিবার। ‘সাগর-রুনি ক্রাইম সিন ডু নট ক্রস’ শিরোনামে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
রুনির ভাই নওশের আলম রোমানদের বাড়িতেই (ফ্ল্যাট বি ২-১, কালিন্দী, ৩৬ ইন্দিরা রোড, ঢাকা) ১০ জন শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে সাগর-রুনির ব্যবহার করা জিনিসপত্র, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও তাদের ছবি নিয়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নওশের রোমান বলেন, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে নিজ বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। তৎকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হবে বললেও আজও হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি। এরপর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার কথা বলা হলেও এর কোনো কূলকিনারা নেই।
তিনি বলেন, ঘণ্টা, মাস, বছর পেরিয়ে কত কি যে হলো, শুধু প্রাপ্তির খাতায় নিদারুণ শূন্যতা। আদালতের ধুলোপড়া বারান্দায় পড়ে রইলো তদন্তের ব্যর্থতা।
এখন এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতেই যেন লজ্জাবোধ করেন মেহেরুন রুনির ভাই নওশের। তিনি বলেন, তদন্তে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি নেই। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া এ হত্যার বিচার সম্ভব নয়। ১১ বছরেও যেহেতু বিচার পাইনি, তাই আমরা বিচার চাইতেও এখন লজ্জা পাই। আমরা বিচার চাইবো কার কাছে।
১১ পেরিয়ে সামনেই ১২ বছরে পা রেখেছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ঘটনা। তবুও এ সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার পায়নি পরিবার। এ পর্যন্ত ৯৫ বারের মতো পিছিয়েছে এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ। এবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৫ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে গত বছরের মাঝমাঝি সময়ে দেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে আবেদন জানিয়েছিল পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ও সাধারণত সম্পাদকসহ কমিটির সদস্যরা। ১১ বছর ধরে সাগর রুনি হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন করছেন সহকর্মীরা। তবে কিছুতেই কিছু হয়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সরকারও চায় সাগর-রুনি হত্যার বিচার হোক। তদন্ত শেষ করতে সবাই সচেষ্ট বলেও দাবি করে তিনি বলেছেন, বিচার তো আমরা করতে পারবো না আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ হোক।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে দেওয়া হয়।সূত্র: জাগো নিউজ