সংকট সমাধানে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার

0

বিরাজমান সংকট সমাধানে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যে বিষয়গুলো থাকতে পারে তা হলো— নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্য; সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার; জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও কার্যকারিতা; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা;  আইনের শাসন নিশ্চিত ও মানবাধিকার সংরক্ষণ; রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তনসহ একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন।’

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে সংবিধান সংশোধনের (অপ)রাজনীতি’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনার অনুষ্ঠানে তারা এইসব বিষয়ে আলোকপাত করেন।

ওয়েবিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক  সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে আমাদের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছিল। যেমন, ১৯৭২ সালের সংবিধান, সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে পুনরায় সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন ইত্যাদি। কিন্তু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংসদ বহাল রেখেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা হয়, যার ফলে ভেঙে যায় রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।

পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের ‘লেজিটিমেসি’ বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, ‘বিরাজমান সংকটের সমাধানের জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়, সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য প্রয়োজন আরেকটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘বিগত ৫০ বছরে আদালত যতগুলো রায় দিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর রায় হলো ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়। এই রায়ের ফলেই আমাদের জনগণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে গেছে এবং আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে গেছে। আমি মনে করি, আগে থেকেই রায় ঠিক করে নিয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে এবং অবাস্তব যুক্তির ভিত্তিতে তাড়াহুড়ো করে এই রায় দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, ‘যে কোনও সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের যুক্ত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ক্ষমতাসীনরাই এটি নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশে পঞ্চদশ সংশোধনী পাসসহ বেশিরভাগ সংশোধনী পাসের ক্ষেত্রে গণভোট আয়োজন না করে জনমতকে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং অতিদ্রুততার সঙ্গে পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাশ করা হয়েছে।

গবেষক আদিবা আজিজ খান বলেন, ‘বড় দুটি দলই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল। ১৯৯৫ সালে বিএনপি এর বিরোধিতা করে বলেছিল এটা অগণতান্ত্রিক। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। আমরা দেখলাম বিএনপি সরকার বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে তোলে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আদালতের এক সংক্ষিপ্ত রায়কে পুঁজি করে সংবিধান থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলসহ আরও কিছু দেশে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com