গুরুতর স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে
স্ট্রোককে ব্রেন অ্যাটাকও বলা হয়। মস্তিষ্কের কিছু অংশে যখন রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বা যখন মস্তিষ্কের একটি রক্তনালি ফেটে যায় তখনই ঘটে স্ট্রোক, এমনটিই জানাচ্ছে ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
স্ট্রোক হলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা মারা যেতে পারে। এ কারণে দীর্ঘমেয়াদী পঙ্গুত্ব এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন কারা?
মায়ো ক্লিনিকের মতে, ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিরা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস কিংবা যাদের পারিবারিক ইতিহাসে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক অ্যাটাকের মতো পূর্ব-বিদ্যমান সমস্যা আছে তারাই বেশি স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন।
এসব সমস্যার পাশাপাশি আরও এক ব্যাধির কারণে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়, আর তা হলো স্লিপ অ্যাপনিয়া। গুরুতর স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
গবেষণা বলছে, স্ট্রোকে আগে ৮০ শতাংশ রোগীর মধ্যে দেখা দেয় স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা। তবে বেশিরভাগই তা নির্ণয় করতে পারেন না।
স্লিপ অ্যাপনিয়া কী?
স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি গুরুতর ঘুমের ব্যাধি, যেখানে শ্বাস বারবার বন্ধ হয়ে যায় ও উচ্চ শব্দে নাক ডাকা শুরু হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া অর্গানাইজেশন অনুসারে, স্ট্রোক হওয়ার আগে ও পরে ঘুমের ব্যাঘাতযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের এই সমস্যা হতে পারে।
তবে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ৮৫ শতাংশ ব্যক্তি জানেন না যে তারা ঘুমের ব্যাধিতে ভুগছেন। তাই এটি মস্তিষ্কে আরও গুরুতর প্রভাব ফেলে বিনা চিকিৎসায়। এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন স্লিপ অ্যাপনিয়া স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ কী কী?
স্লিপ অ্যাপনিয়া মূলত দু’ধরনের- অবস্ট্রাকটিভ ও সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া। মায়ো ক্লিনিকের তথ্য অনুসারে, স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা ঘুমের মধ্যে এই কয়েকটি লক্ষণ টের পেতে পারেন-
১. জোরে নাক ডাকা
২. ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
৩. ঘুমের মধ্যে হাঁপানি
৪. শুকনো মুখ নিয়ে ঘুম থেকে ওঠা
৫. সকালে মাথাব্যথা
৬. ঘুমাতে অসুবিধা বা অনিদ্রা
৭. দিনে অতিরিক্ত ঘুম বা হাইপারসোমনিয়া
৮. মনোযোগের অভাব
৯. বিরক্তিভাব ইত্যাদি।
স্ট্রোকের লক্ষণ কী কী?
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে স্ট্রোক হয়। এটি তখন শরীরের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে, যার ফলে উপসর্গ দেখা দেয়। এর মধ্যে আছে-
১. কথা বলা কিংবা বোঝার সমস্যা
২. মুখ, বাহু বা পায়ে পক্ষাঘাত বা অসাড়তা
৩. দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
৪. মাথাব্যাথা
৫. হাঁটতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাবেন কীভাবে?
আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন। এজন্য ফল ও শাকসবজি সমৃদ্ধ খাবার খান।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন। অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন- ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন থেকে দূরে থাকুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার স্লিপ অ্যাপনিয়া ধরা পড়ে, তাহলে এটি দ্রুত চিকিত্সা করুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া