আ.লীগ সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে দলীয় বইয়ে পরিণত করেছে: রুমিন ফারহানা

0

আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে বিনাভোটে ক্ষমতায় থেকে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে তাদের দলীয় বইয়ে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

তিনি বলেছেন, ‘সরকার সংবিধানের কিছু ধারা এমনভাবে পরিবর্তন করেছে, সেই ধারাগুলো নাকি ভবিষ্যতের কোনও সংসদে পরিবর্তন করা যাবে না। এ ধরনের ধারা সংবিধানে যুক্ত করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তাই বিএনপি ১০ দফা দাবিতে সংবিধান সংস্কার কমিশন করার কথা বলেছে।’

শনিবার (০৭ জানুয়ারি) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা বিষয়ে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। শহরের পুনিয়াউট এলাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের বাসভবন চত্বরে এ সভার আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব উন নবী খান সোহেল।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান জিল্লুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল হক সাঈদ, সদস্য রফিক শিকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জহিরুল হক খোকন ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ প্রমুখ।

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার প্রসঙ্গ টেনে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করবো। কেন করবো? আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে বিনাভোটে ক্ষমতায় থেকে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে দলীয় বইয়ে পরিণত করেছে। বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সংবিধান সংস্কারের এখতিয়ার রাখে না।’

আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো জানিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ। দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এদেশকে নতুন করে গড়ে তুলবো।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষসহ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের অজুহাতে জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। বিএনপি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে রংধনুর সাত রংয়ের মতো রেইনবো ন্যাশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গড়বে।’

যতদিন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন না হবে ততদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হতে হবে উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘জনগণকে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সংবিধানের মালিক জনগণ। জনগণ তার মালিকানা হারিয়েছে। তাই আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, “টেক ব্যাক বাংলাদেশ”। এটি হোক জাতির মূলমন্ত্র।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে প্রায় সব আসনে জয়লাভ করেছিল। দু’একটিতে ন্যাপ ও জাসদের প্রার্থী জয়লাভ করলেও পরে তাদের পরাজিত দেখানো হয়েছে। সেই সময়ের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জয়লাভ করেছিলেন আমার বাবা। কিন্তু পরে ফল বদলে তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে জয়ী দেখানো হয়েছিল। সেই থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভোট কারচুপি করে আসছে আওয়ামী লীগ।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। রাষ্ট্রপতির কোনও ক্ষমতা নেই। তিনি কেবল জানাজা পড়েন আর ফিতা কাটেন। এর বাইরে কোনও কাজ নেই। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার মধ্য দিয়ে ফিতা কাটা আর জানাজা পড়া থেকে রাষ্ট্রপতিকে বের করে নিয়ে আসবো আমরা। একই ব্যক্তি টানা দুবারের বেশি রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। আমরা বলেছি, সংসদকে দুই কক্ষে বিভক্ত করবো। একটি হবে উচ্চকক্ষ অপরটি হবে নিম্নকক্ষ। সংসদকে কার্যকর করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে জানিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘দেশ এখন লুটপাটের রাজ্য। বিদ্যুৎখাত, স্বাস্থ্যখাত ব্যাংক খাত, রাস্তাঘাট, মেগা প্রকল্প, অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। সেজন্য কমিশন গঠন করবো আমরা। কমিশনের মাধ্যমে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীদের আদালত বর্জনের প্রসঙ্গ টেনে রুমিন বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বারের সভাপতি অকথ্য ভাষায় একজন জজকে গালিগালাজ করেছেন। এসব আদালতে চলতে পারে না। জজ সাহেবরা বিএনপি নেতাকর্মীদের আদালতে জামিন দেন না। সরকারের ইশারায় চলছেন। এখন এসবের জন্য আপনারাই দায়ী।’

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কারাগারে থাকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব অত্যন্ত সজ্জন রাজনীতিবিদ। তাকে রাত ৩টার দিকে তুলে নেওয়া হলো। চারদিন ধরে কারাগারে কোনও ডিভিশন দেওয়া হয়নি। হাইকোর্টে রিট করে ডিভিশন নিতে হয়েছে। মামলার এজাহারে তার নাম না থাকা সত্ত্বেও জামিন পাননি। এটাই আদালতের অবস্থা। আমরা ক্ষমতায় গেলে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ গঠন করবো। সেই বিচার বিভাগ দলমত নির্বিশেষে আইনের সমান প্রয়োগ দেখাবে। আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা সংস্কার করবো। কারণ প্রশাসনে তো এখন লীগ ছাড়া কিছু নেই। তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।’

ক্ষমতায় গেলে মানবাধিকার কমিশন গঠন করবে বিএনপি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যেসব গুম, খুন, নির্যাতন, হেফাজতে নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তার প্রত্যেকটির বিচার হবে।’

শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ চিকিৎসা করাতে গিয়ে ফকির হয়ে যাচ্ছে। তাদের জমিজমা বিক্রি করতে হচ্ছে। সে অবস্থা থেকে আমরা তাদের মুক্ত করবো।’

সভায় বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘অবৈধ শাসনের সিংহাসন ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় রয়েছে জাতি। শেখ হাসিনা যদি পুলিশ বাহিনীকে রক্ষী বাহিনীর কায়দায় নিয়ে ভেবে থাকেন যে, এই পুলিশ তাকে রক্ষা করবে, তাহলে তিনি ভুল করছেন। কারণ, এই পুলিশ বাহিনী তার পতন ঠেকাতে পারবে না।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com