জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকার গণমিছিল থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি

0

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে শুক্রবার ঢাকায় ও রংপুরে গণমিছিল করবে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। ওইদিন ঢাকার গণমিছিল থেকে ফের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে। পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবহিক বৈঠক করছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকালে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করে বিএনপি গঠিত লিয়াজোঁ কমিটি। এতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানববন্ধন, গণঅনশন, লংমার্চ, রোডমার্চসহ নানা কর্মসূচির প্রস্তাব এসেছে। তবে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সারা দেশে গণঅনশন ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন নেতারা। এ বিষয়ে লিয়াজোঁ কমিটিকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রমজান পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকতে চান তারা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শুক্রবারে ঢাকা ও রংপুরে পূর্বঘোষিত গণমিছিল এবং পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। পরে বিকালে তারা ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করে। ধারাবাহিকভাবে সমমনা দল ও জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গেও বসবে বিএনপি। একই সঙ্গে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ছাড়ে এ দলটি। যদিও জাসদের আরেক অংশ ক্ষমতাসীন জোটে রয়েছে।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সমন্বয়ে সাত সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। দুপুর ১টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে এই লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপে নানা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটিতে থাকা স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উপস্থিত ছিলেন।

১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক : বিকাল ৫টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের ২ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। এতে বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু। ১২ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে ছিলেন-জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পা?র্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সে?লিম, মুসলিম লীগের মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন প্রধান, এনডিপির মহাসচিব আবদুল্লাহ আল হারুন সোহেল ও জাতীয় দলের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম।

সূত্রমতে, ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলের সমন্বয় এবং পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ১২ দলীয় জোট নেতাদের পরামর্শ নেয় বিএনপি। জোট নেতারা আন্দোলনকে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখে কিভাবে সামনে কর্মসূচি দেওয়া যায় তার পরামর্শ দেন। রমজানের আগ পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণার কথা বিএনপি নেতারা জোট নেতাদের বলেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আরও অসংখ্য রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বৈঠকে জোট নেতারা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত গণঅনশন, গণঅবস্থান, মানববন্ধন, রোডমার্চ, লংমার্চ, ঢাকা মহানগরের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত গণঅবস্থানসহ নানা ধরনের কর্মসূচির কথা প্রস্তাব করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বৈঠকে আমরা ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলে অংশগ্রহণ করব সে বিষয়ে বিএনপিকে অবহিত করেছি। ভবিষ্যতের আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে আমরা কিছু মতামত দিয়েছি। বিএনপি আরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয় এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক, গণমিছিলের জন্য নয়াপল্টন-মগবাজার-বাংলামোটর রুট চেয়েছে : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিন্টু রোডে অবস্থিত ডিএমপি কার্যালয়ে যান বিএনপির নেতারা। প্রতিনিধি দলে ছিলেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তারা গণমিছিলের অনুমতি ও রুট সম্পর্কে পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করেন। পরে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও তার কাছে দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে রাতে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমরা যেভাবে চেয়েছি, সেভাবে তারা মৌখিক সম্মতি দিয়েছেন। আশা করি আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা করবে। তাদের সঙ্গে আলোচনায় সেরকমটাই মনে হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল শুরু হবে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে। এরপর কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর-মালিবাগ-মৌচাক-মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হবে। ওইদিন দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গণমিছিল হবে।সূত্র: যুগান্তর

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com