বারবার হেঁচকি ওঠা কোন কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে-
হেঁচকি ওঠার সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগেন। এটি খুবই সাধারণ এক সমস্যা। তবে একটানা বেশ কিছুক্ষণ হেঁচকি ওঠা বেশ যন্ত্রণাদায়কও বটে।
আবার কারও কারও মধ্যে জন্মগতভাবেও হেঁচকি ওঠার সমস্যা দেখা দেয়। আর কী কী কারণে হেঁচকি ওঠে? এটি কি শারীরিক কোনো রোগের লক্ষণ?
হেঁচকি সাধারণ হলেও অনেকের ক্ষেত্রেই তা মারাত্মক অসুখের ইঙ্গিত দেয়। এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে, বলে মত চিকিৎসকদের।
এ বিষয়ে ভারতের চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানান, শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মধ্যচ্ছদা পেশি। মধ্যচ্ছদা দেহের ভেতরের একটি পর্দা বিশেষ, যা বক্ষ গহ্বর থেকে উদর গহ্বরকে পৃথক করে রেখেছে। এই পর্দা ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক মাংসপেশি দিয়ে তৈরি।
এর উপরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস। নিচের দিকে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার, পাকস্থলী ও প্লীহা।
এই অঙ্গগুলোর মধ্যে কোনোটিতে যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তা ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা পেশিকে বিরক্ত করে। এর ফলেই হেঁচকি ওঠে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক হেঁচকি ওঠা কোন কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে-
১. পাকস্থলীতে হাওয়ার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে হেঁচকি উঠতে পারে। অনেক সময় অনেকক্ষণ না খাওয়ার কারণে পাকস্থলীতে হাওয়ার পরিমাণ বেশি হয়ে যায়।
পাকস্থলী যদি হাওয়ায় কারণে বেশি ফুলে যায় সেক্ষেত্রে পাকস্থলীর উপর অংশ ডায়াফ্রামকে বিরক্ত করে ও হেঁচকি ওঠে।
২. বেশি মসলাদার ও ঝাল খাবার খাওয়ার কারণেও হেঁচকি উঠতে পারে। আবার এমন কিছু খাবার যেগুলো পাকস্থলীতে জ্বালার সৃষ্টি করে সেক্ষেত্রে ডায়াফ্রামও একইভাবে বিরক্ত হয় ও হেঁচকি ওঠে।
ধরুন কেউ হঠাৎ করে যদি অনেকগুলো মরিচ খায়, পরবর্তী সময়ে তার হেঁচকি উঠতে পারে। অতিরিক্ত মসলাদার খাবারেও একই সমস্যা হতে পারে।
৩. পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা থাকলেও হেঁচকি উঠতে পারে। আবার কারো ক্ষেত্রে লিভার বড় হলে জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের মতো সমস্যা হলে হেঁচকি ওঠে।
৪. প্লীহা বড় হয়ে যাওয়ার কারণেও হেঁচকির উদ্রেক ঘটে। প্লীহা বড় হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডসহ বেশ কিছু অসুখ। অনেক হেমাটোলজিক্যাল রোগের কারণেও প্লীহা বড় হতে পারে।
হঠাৎ প্লীহা বড় হয়ে গেলে তা ডায়াফ্রামকে বিরক্ত করে। ফলে হেঁচকি উঠতে পারে। আবার কোনো কারণে ফুসফুসে পানি জমলেও এমনটি ঘটে।
৫. পেরিকার্ডিয়ামে পানি জমলে বা পেরি কার্ডাইটিস হলেও হেঁচকির সমস্যা হতে পারে। ডেঙ্গুর মতো কঠিন রোগেও পেরি কার্ডাইটিস হয়। অনেক ভাইরাল ইনফেকশন থেকে পেরি কার্ডাইটিস হতে পারে।
৬. অনেকের ক্ষেত্রেই হার্টের বিভিন্ন সমস্যার কারণেও হেঁচকি উঠতে পারে। কোনো কোনো সময় হার্ট রেট বেড়ে গেলে হেঁচকি ওঠে।
জানলে অবাক হবেন, অনেকের ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাকের একমাত্র লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় হেঁচকি। বিশেষত হার্টের নিচের দিকে দেওয়াল যা সরাসরি ডায়াফ্রাম এর সংস্পর্শে আসে সেখানে যদি কোনো অ্যাটাক হয় তাহলে তার লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে হেঁচকি।
৭. কোনো কারণে যদি ভেগাস নার্ভ স্টিম্যুলেটেড হয়ে যায়, তাহলেও এ সমস্যা হতে পারে। গলায় কোনো ইরিটেশন হলে অনেক সময় হেঁচকি উঠতে পারে। (মেডালায়) মস্তিষ্কের অংশে কোনো সমস্যা থেকে মৃত্যুও হতে পারে। এক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।
৮. অনেক সময় জন্মগত কারণেও কারো বারবার হেঁচকি উঠতে পারে।
৯. কিডনির সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে হেঁচকি।
১০. এছাড়া অনেকে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেও হেঁচকি উঠতে পারে।
হেঁচকির সমস্যাকে কখনো সাধারণ মনে করা উচিত নয়, এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে নানা শারীরবৃত্তীয় কারণ।
সূত্র: এবিপি/এনসিবিআই