শীতে বয়স্করা সতর্ক থাকবেন যেভাবে

0

শীত এলেই নানা ধরনের মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হন বয়স্করা। ঠান্ডা-জ্বর ও কাঁশির মতো সমস্যাগুলো তাদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়ে থাকে। তবে একটু সচেতন হলেই এ সমস্ত সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। 

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক শীতকালে বয়স্কদের সাধারণত কোন কোন সমস্যা দেখা যায়?

* ঠান্ডায় বয়স্কদের ফ্লু, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, সিওপিডি সমস্যা বৃদ্ধি পায়

* বিভিন্ন ধরনের বাতের রোগীর বাতজনিত ব্যথা শীতে কিছুটা বেড়ে যায়। আসলে শীতকালে শারীরিক পরিশ্রম বা নড়াচড়া কম হয়। ফলে অস্থিসন্ধিগুলো শক্ত হয়ে যায়। সমস্যাগুলিও বাড়ে।

* প্রবল শীতে প্রবীণ মানুষদের অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ে।

* বয়স্কদের চামড়ার শুষ্কতা, চুলকানি, হাত-পা ফেটে যাওয়া, ঠোঁট ফেটে যাওয়া, মুখে-জিভে ঘা, নানা ধরনের চর্মরোগ বা খোস-পাঁচড়া দেখা দেয়।

* ধুলোবালি ও বিভিন্ন ফুলের রেণু ইত্যাদির কারণে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে শ্বাসজনিত সমস্যা, ত্বকের সমস্যা এমনকী পেটের সমস্যাও দেখা দেয়।

* রক্তচাপ একটু বেশির দিকে থাকে। কোনো অবস্থাতেই ওষুধ খেতে ভুলবেন না। রক্তচাপ বাড়লে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বাড়ে।

* অনেকে জল পানের মাত্রা কমিয়ে দেন। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ে।

* শীতকালে বয়স্কদের ডায়ারিয়া কিন্তু মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ঘুরতে গেলে বিশেষ সতর্কতা জরুরি।

* শয্যাশায়ী রোগীর ক্ষেত্রে মূলত পরিচর্যাজনিত অসতর্কতার কারণে ত্বকে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ এবং মূত্রদ্বার, মলদ্বার,  শ্বাসনালীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন—

* বাইরে বেরলে অবশ্যই কান ঢাকা টুপি, মাফলার, জুতো-মোজা, হাতমোজা ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত।

* হাঁপানি বা সিওপিডি থাকলে সবসময় ইনহেলার প্রস্তুত রাখুন। প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করুন। ডোজ বাড়াতে হবে কি না জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

* শীতে শুধু মোটা কাপড় নয়, আরামদায়ক কাপড় নির্বাচন করুন। হালকা একাধিক কাপড় পরলে শীত আরও ভালোভাবে আটকানো যায়।

* ঘরে চটি ও হাত,পায়ে মোজা পরুন।

* বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজার, ভেসলিন, অ্যালোভেরা ক্রিম সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করুন।

* চাদর, বালিশের কভার নিয়মিত পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিন।

* সমগ্র শীতকাল জুড়ে বহু প্রবীণ মানুষ তাদের কামরা বা ঘরের সব জানলা বন্ধ করে রাখেন। এটা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। ঘরে রোদ প্রবেশ করা খুব জরুরি। সেজন্য দুপুরে জানলা খুলে দিয়ে রোদ, হাওয়া ঢুকতে দিন।

* রুম হিটার ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। কেননা এতে চামড়ায় সমস্যা দেখা দেয়।

* দিনের বেলা গরম লাগলেও পাখা চালানো ঠিক নয়।

* স্নান ও মুখ, হাত-পা ধোওয়ার কাজে গরম জল ব্যবহার করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে।

* নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যেস বজায় রাখুন। ঠান্ডার ভয়ে বেগ চাপবেন না।

*  পাত্রে গরম জল নিয়ে তাতে লবণ দিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট গরম ভাপ নিন। উপকার পাবেন। শুকনো কাশি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপশম মিলবে।

* লবঙ্গ, যষ্টিমধু  মুখে দিয়ে রাখলে কাশিতে উপশম মিলবে। আদা, তুলসী পাতা, মিছরি ও গোলমরিচ গরম জলে খেলে আরাম মিলবে।

* প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

* রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ুন।

* মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত থাকুন।

* ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।

* জড়সড় না হয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সময় কাটান। সামাজিক অনুষ্ঠানে পারলে অংশগ্রহণ করুন। মন, শরীর ভালো থাকবে।

* ঘরের মধ্যেই বা কমপ্লেক্সে অথবা বাগানে হাঁটুন। হালকা ব্যায়াম করুন।

* প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিয়ে মেলা বা উৎসবে যোগ দিন। ঘুরতে গেলে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে যেতে ভুলবেন না। যাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে খুব ভালো হয়।

*  হাতের কাছে কিছু জরুরি নম্বর রেখে দিন। যেমন গৃহ চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স, নিকটবর্তী হাসপাতাল ইত্যাদি।

* ফিজিওথেরাপি, যোগা, স্পাইরোমেট্রি শীতকালে বয়স্কদের জড়তা বা ব্যথা-বেদনা বাড়ে। সেক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি করালে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে প্রাণায়াম, বিভিন্ন শ্বাসের ব্যায়াম, যোগা খুব উপকারে আসে। স্পাইরোমেট্রির মাধ্যমে ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতা বাড়ে। অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট বা যোগাথেরাপিস্ট এর তত্ত্বাবধানে করাই সমীচীন।

ডায়েট

* রোজকার খাবারে শাকসব্জি, বিশেষ করে গাজর, টম্যাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি রাখুন। চিকিৎসক কিছু নিষেধ করলে মানবেন।

* খাদ্যতালিকায় থাকুক শীতকালীন ফলমূল, ভিটামিন, মিনারেল বা খনিজ লবণ সমৃদ্ধ খাবার।

* গরম খাবার খেতে চেষ্টা করুন।

* বাসি খাবার একেবারেই খাবেন না।

* পর্যাপ্ত জল পান করুন। ঈষদুষ্ণ জল পান করতে পারলে ভালো।

* নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে খাবার খাবেন। রাতে হালকা খাবার খেতে হবে। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দুধ খেতে পারেন রাতে।

ভ্যাকসিন

* অবশ্যই নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন নিয়ে নিন। এক বছরের ব্যবধানে পিসিভি ১৩ ও পিপিএসভি ২৩ নিতে হবে। প্রতি বছরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন না নেওয়া থাকলে নিন।সূত্র: ঢাকাপোস্ট

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com