জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নিজ পরিচয়েই প্রার্থী হতে পারবেন হিজড়ারা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ পরিচয়েই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা-সমাজে যারা হিজড়া নামে পরিচিত। এ সুযোগ দিয়ে ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধামালা, ২০০৮’-এ সংশোধনী নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে সারা দেশে ৭৩৭ জন হিজড়া নিবন্ধিত রয়েছেন।
এদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হলে ফলাফল বিবরণীর সঙ্গে ইভিএম থেকে প্রিন্ট কপিও সংযুক্ত করে দেওয়ার বিধান রেখে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের নবম সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সভায় ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের প্রস্তাব তোলা হলেও সেটি ফেরত দেওয়া হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধনীতে আইন মন্ত্রণালয়ের সাড়া না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে এটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেনি কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় ‘ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯’, ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধামালা, ২০০৮’ ও ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিধিমালা, ২০১৮’ সংশোধনী প্রস্তাব তুলেছিল ইসি সচিবালয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম রংপুর সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ইসির সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে তিনি আইন ও বিধিমালা সংশোধন প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হিজড়া পরিচয়ে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিতে ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধামালা, ২০০৮’-এ সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। এতে জাতীয় নির্বাচনের তফশিলের মনোনয়ন ফরম-১ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ে পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের পাশাপাশি হিজড়া শব্দ যুক্তের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কর্মকর্তারা আরও জানান, হিজড়া পরিচয়ে বর্তমানে ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রার্থী হওয়ার ফরমে পুরুষ বা মহিলা যে কোনো একটি লিঙ্গ বেছে নিতে হয়। এ পদ্ধতিতেই নির্বাচন করে হিজড়া সম্প্রদায়ের একাধিকজন নির্বাচিতও হয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে নিজ পরিচয়েই তারা প্রার্থী হতে পারবেন।
এদিকে আইন মন্ত্রণালয়ে আরপিও সংশোধনী আটকে থাকলেও ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিধিমালা, ২০১৮’ সংশোধনী বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ইসি। এ সংশোধনীর ফলে ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপ দিয়ে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে পারবেন। এ বিধান আরপিওতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করে তা পাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। যদিও ওই সংশোধনী কোনো প্রক্রিয়ায় রয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারেনি ইসি। এ অবস্থার মধ্যে বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করল কমিশন।
এছাড়া ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংশোধনীতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ইসি। এসব সংশোধনীর ফলে বাবা-বা মায়ের নাম নেই বা পরিচয় জানা নেই এমন নাগরিকরাও ভোটার হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বাবা বা মায়ের নামের স্থলে ‘অপ্রাপ্য’, ‘অজ্ঞাত’ ও ‘অনিচ্ছুক’ শব্দ লেখা যাবে। বর্তমানে বাবা ও মায়ের নাম উল্লেখ ছাড়া ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।