দেশের মানুষ যখন তেল-নুন কিনতে পারে না, তখন প্রধানমন্ত্রী পুকুরে চিতল মাছ শিকারে ব্যস্ত
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের মানুষ যখন তেল-নুন কিনতে পারে না, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। প্রধানমন্ত্রী তখন গণভবনের পুকুরে চিতল মাছ শিকারে ব্যস্ত। ইদানিং প্রধানমন্ত্রী ভালো সাজার চেষ্টা করছেন। ভালো মানুষ সাজা সহজ, কিন্তু হওয়া কঠিন।
জনগণের কঠিন আন্দোলনে বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের অবসান হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা স্টেডিয়ামে উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও তিনি কোনো শিক্ষা নেননি। তিনি এমন প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন। যেখানে প্রতিনিয়ত মিথ্যা শিখে ভাইস প্রিন্সিপাল এর দায়িত্ব পালন করেছেন। আর ওই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল হলেন শেখ হাসিনা। সরকারি টাকা খরচ করেও আওয়ামী লীগ ঢাকা জেলার সম্মেলনে লোক আনতে পারেনি। ওখানে ছিলো জ্বীন ভূত। আর নওগাঁ জেলার সামান্য বদলগাছি উপজেলার সম্মেলন দেখে যান কী পরিমাণ লোক হয়েছে। সুতরাং মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করুন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সরকারের উন্নয়নের সামনে রয়েছে পর্দা। যেটা সরালে দেখা যায় লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি। আজকে বলেছেন দুর্ভিক্ষ আসছে। বিশ্বের কোনো প্রধানমন্ত্রী এভাবে ভয় দেখায় না। এতো উন্নয়ন করলেন তো মানুষের হাতে টাকা কোথায়? দুর্ভিক্ষ আসবে না; ইতিমধ্যে এসে গেছে। খাগড়াছড়িতে মা তার সন্তানকে বিক্রি করতে নিয়ে গেছে। এটা দুর্ভিক্ষের নমুনা। আর শেখ হাসিনা অবৈধভাবে মসনদে বসে আছেন। আপনি তো সেটা টের পান না।
রিজভী বলেন, সরকার নাকি লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়েছে। তাহলে এখন শতভাগ বিদ্যুৎ কোথায় গেলো? বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ কোথায়? জনগণ এটা জানে যে, আপনার উন্নয়নের সামনে রয়েছে পর্দা। যেখানে আছে মানুষের কংকাল। আজকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) বলছে ৬৮% মানুষ খাবার কিনতে পারছে না। আজকে উন্নয়ন কোথায়? দুর্ভিক্ষের হাতছানি কেনো? আসলে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের ও দলীয় এবং আত্মীয় স্বজনের জন্য উন্নয়ন করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও তার মন্ত্রী এমপিদের পকেট হাতরে দেখলে রিজার্ভের টাকা বের হবে। আওয়ামী লীগের যারা কানাডায় বেগম পাড়া বানিয়েছে তাদের পকেটে রিজার্ভের টাকা আছে।
তিনি বলেন, ভালো মানুষ হতে হলে সত্য কথা বলতে হবে। মানুষের উন্নয়ন করতে হবে। আপনি ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করছেন কিন্তু হতে পারবেন না। আপনি মানুষের কল্যাণ ও শান্তি দিতে জানেন না। আপনি নূরে আলম, আব্দুর রহিম ও শাওনকে গুলি করে হত্যা করতে জানেন।
রিজভী বলেন, আজকে অন্যায়ভাবে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে শতকরা পঞ্চাশ শতাংশ। আজকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন- দিনে বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন ভেন্নার তেল দিয়ে কুপি বা বাতি জ্বালাতে হবে। তাহলে এই কদিনেই বিদ্যুৎ, চাল-ডাল উধাও হয়ে গেছে? কারণ আপনার নিষ্ঠুর ভুল নীতি। কারণ আপনি জোর করে ক্ষমতায় আছেন। তিনি মিষ্টি কুমড়া দিয়ে বেগুনি বানানোর রেসিপি দিয়েছেন। তিনি কি সেটা খান?
তিনি আরও বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী গণভবনের পুকুরে চিতল মাছ শিকার করছেন। আর তিনি তার বোনকে সেটা দেখাচ্ছেন। তার মানে হলো দেশের অবস্থা খারাপ না। তিনি চিতল মাছ শিকার করছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জানেন না দেশের খেটে খাওয়া মানুষ চিতল মাছ খাওয়া তো দূরে থাক তেল নুন কিনতে পারে না। কারণ তিনি তো মহারানী ও মহা সম্রাজ্ঞী তিনি তো সেটা টের পান না।
রিজভী বলেন, নির্বাচন হয় দিনের আলোতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জনগণের দুর্বার আন্দোলন ও শক্তিকে ভয় পায় বলেই দিনের ভোট রাতে করেছেন।
তিনি বলেন, আজকে বিদ্যুৎ খাতের লুটপাট আড়াল করার জন্য তিনি ইনডেমনিটি আইন করেছেন। এরমাধ্যমে তিনি প্রধান অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। আর যে ঘটনার সাথে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই তাকে সেই মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছেন। আর আপনি ডাকাতের মত সিংহাসন ধরে রেখেছেন। খালেদা জিয়া দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলেন। আর শেখ হাসিনা এরশাদের সাথে নির্বাচনের কথা বলেন। এখানেই খালেদা জিয়ার সাথে শেখ হাসিনার পার্থক্য।
রিজভী বলেন, আমরা আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। কোনো বুলেট ও টিয়ারশেল আমাদের রুখতে পারবেনা। আজকে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় নেই। মনে হয় জনগণ ক্ষমতায় রয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপির গণসমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণিত করে। এটা হচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের সম্মান ভালোবাসা। ইনশাআল্লাহ্ দেশ থেকে তৃণমূল নেতাদের আন্দোলনে শেখ হাসিনার নমরুদীয় শাসনের অবসান হবে। তারা কোনো ধর্মঘট বা অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আমাদেরকে রুখতে পারবে না। আমাদের নেতা চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীর গুম খুনের বিচার একদিন বাংলাদেশের মাটিতে হবে।