‘বিএনপি’র দাবী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সমাবেশের একটাই লক্ষ্য হাসিনার পতন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। নির্বাচনের পরে সকল দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা।
গতকাল শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত। ব্যবসা বাণিজ্য কোথাও স্বস্তি নেই। বিশ্ব জেনে গেছে মানবাধিকার নিয়ে এই সরকার মিথ্যাচার করে। সমাবেশ দেখে সরকার ভয় পেয়েছে। ভয় না পেলে গাড়ি বন্ধ করে দিত না। এই সমাবেশের ওপর বিশ্ব মিডিয়া গুরুত্ব দিয়েছে। সমাবেশের একটাই লক্ষ্য হাসিনার পদত্যাগ। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যা ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল। শেখ হাসিনা ও এই বিনা ভোটের সরকার সেই চেতনা ধ্বংস করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নাকি জনগণকে ভয় পায় না তাহলে দুইদিন আগে গাড়ি বন্ধ করল কেন? বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই জেগে উঠবে এবং এই ভয়াবহ একনায়ক হাসিনা সরকারের পতন ঘটাবে। এই সমাবেশের একটাই কারণ। একজন মাত্র ব্যক্তি, একটামাত্র দল গত ১৫ বছর ধরে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্যাতন করছে। বিএনপির ওপর নির্যাতন করছে। আমাদের সমস্ত দেশটাকে তারা কুঁলে কুঁরে খেয়ে ফেলছে।
ফখরুল বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম কেন হাসিনার এই বাংলাদেশে দেখার জন্য? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবো সেজন্য। এখন কি আমরা ভোট দিতে পারি? আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। এর আগে ’১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছে। আমরা সেই নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেব না।
নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সোজা কথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না; সাফ কথা। আমাদের একটাই দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আমাদের দাবি সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, তাদের মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোট হবে এবং জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে।
আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন কি ঘরে ঘরে চাকরি আছে? চাকরি দিয়েছে? আওয়ামী লীগের লোক হলে চাকরি দেয়। ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি হয়। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তাই এই ঘুষখোর, এই ভোট চোরদের আর মানুষ দেখতে চায় না।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন আবার নতুন একটি ধুয়া তুলছে। জঙ্গিবাদ আবার বাংলাদেশের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটা হচ্ছে আরেকটি চক্রান্ত। বলেছে যারা অগ্নিসংযোগ করেছে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত তাদের রেহাই দেয়া হবে না। ওই অস্ত্র আপনাদের ভোঁতা হয়ে গেছে। ওই অস্ত্র আর চলবে না। আপনাদের আসল চেহারা সকলেই জেনে গেছে। পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা তাদের রিপোর্টে লিখেছে এই সরকার যা বলে মিথ্যে বলে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার মানবাধিকার সম্পর্কে যে সকল রিপোর্ট দেয় তা মিথ্যে। এখানে মানবাধিকার নেই। মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে কথা বলতে দেয় না। নির্বাচনের পূর্বে সভা করতে দেয় না, নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয় না। কথায় কথায় হকিস্টিক, রামদা, আর বন্দুক নিয়ে আসে।
ফখরুল বলেন, আর এভাবে চলতে দেবে না এদেশের মানুষ। দেশের মানুষ এখন রুখে দেবে। ওই বন্দুক, ওই পিস্তল, ওই লাঠি, ওই হকিস্টিক সব ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের কথা আর দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। তারা মিথ্যা কথা বলে উন্নয়ন করার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের কাছে দেশ নিরাপদ নয়। প্রধানমন্ত্রী এখন বলেন, ‘‘দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে’’। কেন দুর্ভিক্ষ হবে? এবার আমরা সে সুযোগ দেবো না। তার আগেই ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামানো হবে। আমাদের পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। একটাই দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার বিএনপির মহাসমাবেশকে বানচাল করার জন্য মোটর মালিক সমিতি দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করেছিল। তারা ভেবেছিল, নেতাকর্মীরা আসতে পারবে না। কিন্তু আমি রংপুর বিভাগের বীর জনতাকে স্যালুট জানাই। মহাসমাবেশের তিন দিন আগেই হাজার হাজার নেতাকর্মী পায়ে হেঁটে, বাইসাইকেলে, অটোরিকশা করে রংপুরে এসে তারা বিভিন্ন স্থানে অমানবিকভাবে চিড়ামুড়ি, গুড় খেয়ে দিনযাপন করে মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছে। রংপুরের মহাসমাবেশ ইতিহাসে বৃহত্তম মহাসমাবেশে রূপ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এতদিন শুনতাম বিরোধীদল হরতাল ডাকে। এবার দেখলাম, সরকারি দল বিরোধীদলের সমাবেশ পণ্ড করার জন্য হরতাল ডাকলো। সরকার বিরোধীদলকে প্রতিরোধ করে এমন কথা কখনও শুনিনি। আওয়ামী লীগ, পুলিশ, ছাত্রলীগ, সন্ত্রাসী লীগ দিয়ে বিএনপিকে দমন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন সেই দিন শেষ। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা হবে। ’
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘রংপুর বিভাগের মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এবার দেখলাম, ধর্মঘটের নামে সব কিছু বন্ধ করেও জনতার স্রোত ঠেকানো যায়নি। প্রধানমন্ত্রী দুদিন আগে বলেছেন, ‘‘পেট্রোল বোমা মেরেছে যারা তাদের বিচার করবেন’’। কিন্তু তাদের আমলেই তো সিপিবির সমাবেশে আর রমনার বটমূলে বোমা হামলা করেছিল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর সময় নেই, এবার তাদের ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনেহিঁচড়ে নামাতে হবে। জনগণের সরকার কায়েম করতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ওবায়দুল নতুন নতুন কথা বলেন জ্ঞান দেন। তার সঙ্গে আমি দুই বছর কারাগারে ছিলাম, তখন দলের বিরুদ্ধে অনেক আজেবাজে কথা বলেছে- তা বলতে চাই না। তবে তিনি প্রায়শই কাঁদতেন। তবে এ সরকারের পতনের ঘণ্টা বেজে গেছে। এবার সরকারকে হটিয়ে দেশের মানুষ জনগণের সরকার কায়েম করবে।’