রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি

0

রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির আমির আল্লামা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব-মধুপুর) কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানান।

শনিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় গুলিস্তান কাজী বশির মিলনায়তনে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বক্তৃতাকালে পীর সাহেব-মধুপুর বলেন, আমরা মুসলমান। আমাদের বিশ্বাস হলো হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তারপর নতুন করে কেউ নবী রাসূল হিসেবে আগমণ করবে না। এটা কুরআন-সুন্নাহ ইজমা-কিয়াসের সর্বসম্মত বক্তব্য। উপরোক্ত বিষয়টি দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। যা অস্বীকার করলে কিংবা সন্দেহ পোষণ করলে ঈমান থাকে না। অথচ তথাকথিত ‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’ নামধারী কাদিয়ানীরা নিজেদের মুসলিম দাবি করলেও উল্লেখিত বিশ্বাসটি অস্বীকার করে। যার ফলে তারা মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস থেকে বের হয়ে যায়। তাদের নতুন এক ধর্ম বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা হলো কাদিয়ানী ধর্মমত। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, তাদের অসংখ্য কুফুরী মতবাদের মধ্যে একটি হলো এই- ‘মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রতিশ্রুত মাসীহ, ইমাম মাহদী এবং প্রেরিত নবী ও রাসূল’ (নাউজুবিল্লাহ ) (রুহানী খাযায়েন-খ:১৮ পৃ:২০৭, কালিমাতুল ফসল-১৫, লেখক: মির্জাপুত্র বশির আহমদ এম এ, আখবারে বদর আল:২ পৃ:৪৩) এ সকল অসংখ্য কুফুরী মতবাদ প্রচার করে তারা মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস করছে। তাই তাদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

পীর সাহেব আরো বলেন, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষ এদেশে একসাথে বসবাস করে। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিক ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলিম। সকল ধর্মের অনুসারীরা স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। বাংলাদেশের মহান সংবিধানেও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণের কথা সুস্পষ্টভাবে রয়েছে।

এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং ইসলামের নামে তাদের সকল প্রকাশনা, প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করতে হবে, ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করা অমুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ। অতএব ইসলামের সকল পরিভাষা যেমন- কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, মসজিদ, আজান, ইকামত, নবী, মাহদী শব্দ ইত্যাদি তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।

বক্তারা বলেন, কাদিয়ানীরা শত শত একর জমি ক্রয় করে রাষ্ট্রের ভেতরে আলাদা রাষ্ট্র কায়েম করার পরিকল্পনা করছে, তাদের এই পরিকল্পনা ধ্বংস করে দিতে হবে। আমরা সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আলেমদের দাবি- তারা পূর্ব থেকেই তারা কাফের হয়ে আছে, এক্ষেত্রে আদালতের একটি রায়ও রয়েছে, এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রীয়ভাবে সেটির বাস্তবায়ন করা।

উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুফতি ও মুহাদ্দিস আওলাদে রাসূল সা: সায়্যিদ মুফতি মোহাম্মাদ সালমান মানসুরপুরী, উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বক্তব্য রাখেন শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুর হক, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা ইসমাইল নুরপুরী, পাকিস্তান করাচি দারুল উলুমের নায়েবে মুফতি মুফতি আবদুল মান্নান, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান (পীর সাহেব বাহাদুরপুর), বরিশাল মাহমুদিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, ঢালকানগর মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা জাফর আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফিন্দী, দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মুফতি আব্দুল মুনতাকিম, ইকরা টিভি লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়াত মুভমেন্টের আমির মুফতি শোয়াইব ইব্রাহীম, শাইখুল হাদিস মাওলানা রশিদ আহমদ, টঙ্গী দারুল উলুমের মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মুফতি মাসউদুল করীম, মাওলানা বশির আহমদ মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালীর পাঙ্গাশিয়া পীর, মাওলানা আতাউল্লাহ বুখারী,মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাভার, মাওলানা ইমদাদুল ইসলাম, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মোঃ আনাস ভোলা, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল মাজীদ, মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া, মুফতি মিনহাজ উদ্দিন, ড.মাওলানা শহিদুল্লাহ উজানবী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, মুফতি জাবের কাসেমী, মুফতি নিছার আহমদ মুন্সিগঞ্জ, শাইখুল হাদিস মাওলানা আব্দুল লতিফ ফারুকী, মুফতি আবদুর রশিদ সিলেট, মুফতি মুহাম্মদ রুহুল আমিন, মুফতি মাহবুবুর রহমান নবাবগঞ্জী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিছবাহ, মাওলানা ইউনুছ কাসেমী, মুফতি জুনায়েদ গুলজার, আলহাজ্ব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, মুফতি সৈয়দ রহমান জিয়া, মাওলানা আনোয়ার হামিদী প্রমুখ।

মাওলানা শফিক সাদীর পরিচালনায় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ইমাদুদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী, হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ, মাওলানা নাজমুল হাসান বিন নূরী ও হাফেজ মাওলানা হারুনুর রশিদ।

সভা শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী। সেগুলো হলো-

১. প্রশাসনের সকল গুরুত্বপূর্ণ দফতরে খতমে নবুওয়াতের ফাইল প্রদান।
২. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
৩. বিভাগীয় সমাবেশ
৪. জাতীয় মহাসমাবেশ

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com