গান্ধী পরিবারের ছত্রছায়া থেকে বেরোতে চাইছে ভারতের ঐতিহাসিক দল কংগ্রেস!
গান্ধী পরিবারের ছত্রছায়া থেকে বেরোতে চাইছে ভারতের ঐতিহাসিক দল কংগ্রেস। দুই দশকেরও বেশি সময় পর (১৯৯৮-২০২২) দায়িত্ব ছাড়তে চাইছে গান্ধী পরিবারও। সেই লক্ষ্যে সোমবার শুরু হয়েছে ভোট। লড়াই হচ্ছে তিনবারের লোকসভার এমপি শশী থারুর (৬৬) ও কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা দলিত প্রতিনিধি মল্লিকার্জুন খাড়গের মধ্যে। বর্ষীয়ান এই দুই নেতার একজনই হবেন কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ সভাপতি। তবে খাড়গেই যে ‘গান্ধী পরিবার’র অঘোষিত প্রার্থী- ইতোমধ্যেই সে বার্তা পৌঁছে গেছে দলের নেতাদের কানে। জিতলে তিনিই হবেন কংগ্রেসের আরেক দলিত সভাপতি। ৫২ বছর আগে (১৯৭০-৭১) কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন বিহারের দলিত নেতা জগজীবন রাম। ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস।
৯ হাজার ৮শ প্রতিনিধি এদিন ভোট দেন সভাপতি নির্বাচনে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৩৬টি ভোটকেন্দ্রের ৬৭টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে ৪টা পর্যন্ত। প্রতি বুথে ভোট দেন ২০০ জন। নির্দিষ্ট রাজ্যের প্রতিনিধিরা সেই ভোটকেন্দ্রে টিক মার্ক দিয়ে ভোট দিয়েছেন। ভালো ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য সবরকম ব্যবস্থায় ছিল কেন্দ্রগুলোতে। বেলা ১১টায় দিল্লির চব্বিশ আকবর রোডে দলের সদর দপ্তরে ভোট দেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। মায়ের সঙ্গে ভোট দেন প্রিয়াংকা গান্ধীও। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ মোট ৭৫ জন প্রতিনিধি ভোট দেন এই কেন্দ্রে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে স্থগিত রাখা হয় রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা। ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুলসহ যে ৪০ প্রতিনিধি রয়েছেন তারা ভোট দেন কর্নাটকের বেলারি জেলার বিশেষ ভোটকেন্দ্রে। আজ (১৮ অক্টোবর) সারা দেশ থেকে ব্যালট বক্স এসে পৌঁছাবে দিল্লিতে। ১৯ তারিখ গণনা ও ফলাফল।
ভোটের দিনে পিসিসি অফিসগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া হয়। যার ফলে কে কাকে ভোট দিয়েছেন তা জানা যাবে না। দিল্লিতে দুটি ভোটকেন্দ্র। একটি ভোটকেন্দ্র চব্বিশ আকবর রোডে, কংগ্রেসের সদর দপ্তরে। অন্যটি দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কার্যালয়ে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ এআইসিসি সদর দপ্তর দিল্লিতে ভোটগ্রহণ চলবে।
কংগ্রেসে সভাপতি পদে শেষবার ভোট হয়েছিল ২০০০ সালে। সেসময় ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে উত্তরপ্রদেশের রাজিব-ঘনিষ্ঠ নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদকে হারিয়েছিলেন সোনিয়া। জিতেন্দ্র পেয়েছিলেন মাত্র ৬৭টি ভোট। এর আগে ভোট হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। জিতেছিলেন কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ সীতারাম কেশরী। হারিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ার ও রাজস্থানের রাজেশ পাইলটকে।
কে ধরবেন কংগ্রেসের হাল?
কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতাদের অধিকাংশই বাজি ধরেছেন খাড়গের পক্ষে। মল্লিকার্জুন খাড়গের মতো সিনিয়র নেতাই কংগ্রেসের মতো দলকে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারবেন বলে আশাবাদী দলের পুরোনো নেতাদের একটি বড় অংশ। থারুরকে তারা ‘এলিট ক্লাশের’ প্রার্থী হিসাবেই দেখছেন। শশী থারুরের পক্ষে রয়েছে মূলত দলের নবীন প্রজন্মের বড় অংশ। থারুরও নিজেকে ‘পরিবর্তনের প্রার্থী’ হিসাবে তুলে ধরেই এতদিন প্রচার সেরেছেন। আজ তার ‘অগ্নিপরীক্ষা’। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগে থেকেই থারুর ও খাড়গে-দুজনেই দেশজুড়ে প্রচার চালিয়েছেন। রাজ্যে-রাজ্যে গিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ১৩৭ বছরের কংগ্রেসের ইতিহাসে ষষ্ঠবার নির্বাচন করে দলের সভাপতি খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে ১৯৪৮-২০২২ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের সভাপতি পদে ছিলেন গান্ধী পরিবারের ৫ সদস্য।