৯২তম ব্রুনাই সুলতানের ৭০০০ গাড়ির মধ্যে আছে সোনার রোলস রয়েসও!
গাড়ির শখ অনেকেরই থাকে। কেউ পছন্দ করেন নতুন মডেলের গাড়ি, কেউবা পুরোনো দিনের গুলো সংগ্রহে রাখেন। তবে ব্রুনাই সুলতানের সংগ্রহে আছে এমন সব গাড়ি যার অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় মুছে গেছে। এই সুলতানের গ্যারেজে রয়েছে কমপক্ষে ৭ হাজার গাড়ি। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছেন এই সুলতান।
তার ধনসম্পত্তির পরিমাণ বা বিলাসবহুল জীবনের কথা শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে। এক সময় তিনি ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী। এখন তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ৬০০ বছরের বেশি পুরোনো রাজবংশের উত্তরাধিকারী সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ উত্তরাধিকার সূত্রেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনেকগুলো বিলাসবহুল হোটেলের মালিক সুলতান। এসব দেশে বিপুল ভূ-সম্পত্তিরও মালিকানা রয়েছে তার।
প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হওয়ার পাশাপাশি তা খরচ করাতেও কম উৎসাহী নন ব্রুনাইয়ের ৯২তম সুলতান। এই বিলাসী সুলতান প্রত্যেক মাসে অন্তত এক বার চুলে ছাঁটেন। সুলতানের চুল কাটার জন্য আছে তার নিজের মালিকানাধীন ব্রিটেনের দ্য ডরচেষ্টার হোটেলের একজন নাপিত। তিনি নিয়মিত বিমানের প্রথম শ্রেণিতে চেপে উড়ে আসেন ব্রুনাই। বিমান ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ, নাপিতের পারিশ্রমিক বাবদ প্রতি মাসে খরচ হয় ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
১৯৬৭ সালের ৫ অক্টোবর ব্রুনেইয়ের সিংহাসনে বসেন ইবনে ওমর আলি সাইফউদ্দীন। দুনিয়াজুড়ে যিনি ‘হাসানাল বলকিয়াহ’ নামেই পরিচিত। নিজের বিলাসবহুল প্রাসাদের পেছনে খরচ করেছেন কোটি কোটি টাকা, আবার নিজের ব্যক্তিগত প্রাইভেট জেট বিমানটিকেও মুড়িয়েছেন সোনা দিয়ে। যেটিকে বলা হয় ভাসমান প্রাসাদ।
বহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বাহন তার সোনায় মোড়ানো রাজকীয় রোলস রয়েস। বিশেষ ডিজাইনের রোলস্রয়েসের ছাদ খোলা এবং পেছনে ছাতা সংযুক্ত করা। এটি মোড়ানো হয়েছে ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে। যার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা। গাড়ির চাকা থেকে শুরু করে ছোট বড় যন্ত্রাংশ সবই সোনায় মোড়ানো। এতে চেপে সুলতান শহর ভ্রমণ করেন। আবার রাজপরিবারের সদস্যদের বিয়ের অনুষ্ঠানের পর প্রথা অনুযায়ী প্রজাদের দর্শন দিতেও ব্যবহার হয় এই গাড়ি।
গাড়ি রাখার জন্য সুলতানের আছে ১১০টি গ্যারেজ। গ্যারেজে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে আছে ৪৫০টি ফেরারি, ২৭৫টি ল্যাম্বরগিরি, ২৫৮টি অ্যাস্টন মার্টিন, ১৭২টি বুগাটি, ২৩০টি পোরশা, ৩৮০টি বেন্টলি, ৬০০টি রোলস রয়েস, ৫৭০টি মার্সিডিজ বেঞ্জ, ২৬৫টি অডি, ২৩৭টি বিএমডাব্লিউ, ২২৫টি জাগুয়ার এবং ১৮৩টি ল্যান্ড রোভার।
গুঞ্জন আছে, ২০০০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে বিক্রি হওয়া ফেরারির মোট গাড়ির অর্ধেকের বেশি নাকি কিনেছিলেন সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও দামি বাড়ির অবস্থান ব্রুনাইয়ে। প্রাসাদটির অবস্থান ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানের কাছাকাছি। সোনায় মোড়ানো বাড়িটি রেকর্ড গড়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে। এই বাড়ির চাকচিক্য আপনাকে যেমন বিস্মিত করবে তেমনই করবে মুগ্ধ। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম এই বাড়ির নাম ‘ ইস্তানা নুরুল ইমান’।
তবে শুধু বিলাসিতাই নয় ইসলামী শরীয়া আইনে দেশ চালানোসহ নানা কারণে আলোচিত এই সুলতানের জীবন। ব্রুনাইকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সব অনিয়ম থেকে মুক্ত রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।
১৯৪৬ সালে ব্রুনাইয়ের সুলতান তৃতীয় সুলতান ওমর আলি সাইফউদ্দিনের ঘরে জন্ম হাসান আল বলকিয়ার। তৃতীয় সুলতান ওমর আলি সাইফউদ্দিন ১০ সন্তানের মধ্যে তাকেই রাজ্য চালানোর জন্য বেছে নেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ব্রুনাইয়ের সুলতানের সিংহাসনে বসেন। সেই থেকে ৫৪ বছরের বেশি সময় ধরে রাজত্ব চালিয়েছেন এই ৭৫ বছর বয়সী এই সুলতান।
সূত্র: হটকারস, দ্য সান