ইদানীং বাসের কালো ধোঁয়ার কারণে ঢাকা শহরে জোরে শ্বাস নেয়াও যায় না

0

ঢাকায় চলাচল করে এমন প্রায় অর্ধেক লোকাল বাস এবং প্রায় সব ধরনের ট্রাক কালো ধোঁয়া ছাড়ে। সিএনজির দাম বাড়ার পর এবং সম্প্রতি ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ায় বাস ও ট্রাকগুলো আর সিএনজি ব্যবহার করে না। এমনকি কোনো কোনো ফোর স্ট্রোকের মোটরসাইকেল থেকেও কালো ধোঁয়া বেরুচ্ছে। ইদানীং কালো ধোঁয়ার কারণে ঢাকা শহরে জোরে শ্বাস নেয়াও যায় না, ফুসফুসে আটকে যায়। কারণ ঢাকার বাতাসে এত ভারী ধাতু রয়েছে যে, জোরে শ্বাস নিলে কষ্ট হয়।
গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বের হলেও দেখা যায়, এই অবস্থাতেই মাসের পর মাস গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছে ড্রাইভাররা। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মাসের পর মাস একই ধরনের যানবাহন থেকে কালো ধোঁয়া বেরুচ্ছে। ইঞ্জিন ত্রুটিপূর্ণ হলেই এমন হয়ে থাকে। যাত্রাবাড়ি-টঙ্গী রুটে চলাচল করে এমন একটি বাসের ড্রাইভার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভাই ইঞ্জিন দেখা আমার কাজ নয়, আমার কাজ গাড়ি চালানো। মালিক ইঞ্জিন ঠিক করে না দিলে আমি কী করবো? আপনারা সাংবাদিক, আপনারা রিপোর্ট করে দেন, পুলিশ দেখবে সেটা।’

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হোসেন জানান, কালো ধোঁয়ার সাথে বেশ কয়েক ধরনের কণা, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সিসাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বেরুচ্ছে এবং তা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। ধোঁয়ায় থাকা কিছু ভারী ধাতু অক্সাইড ফুসফুস, হার্ট ও কিডনিকে অকেজো করে দিতে পারে। ইদানীং শুধু ঢাকা কেন, সারা দেশেই স্ট্রোক, হার্ট, কিডনি জটিলতার রোগী বেড়ে গেছে। এসব জটিলতার জন্য বাতাসে থাকার ভারী ধাতুও দায়ী।

রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: কামরুজ্জামান বলেন, ধোঁয়ার মধ্যে থাকা ভারী ধাতু শাসতন্ত্রে (রেসপিরেটরি সিস্টেম) ঢুকে পড়ছে। পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তের মাধ্যমে ঢুকে অন্যান্য অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের লক হেভেন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. খালেকুজ্জামানের এক গবেষণায় তিনি দেখান যে, ঢাকার বাতাসে ক্রোমিয়াম, পারদ, সিসা, দস্তা এবং নিকেলের পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এ জন্য শিশুদের ক্ষতি বেশি হয়। ফলে শিশুরা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হচ্ছে, পড়াশোনার প্রতি শিশুদের মনোযোগ কমে যাচ্ছে। বাতাসে থাকা ক্রোমিয়াম ক্যান্সার তৈরিতে সহায়তা করে এবং আর্সেনিক বাড়াচ্ছে চর্মরোগ।

কালো ধোঁয়ায় যে শুধু শ্বাসকষ্ট হয় তা নয়, কালো ধোঁয়ার মধ্যে থাকা ধাতু দীর্ঘদিন পরিবেশে থেকে যায়। এতে ঢাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে, ঢাকা হয়ে উঠছে বিশ্বের অবাসযোগ্য শহরগুলোর একটি।

গাড়ি থেকে কেন কালো ধোঁয়া বের হয়? প্রকৌশলীরা বলছেন, গাড়ির ইঞ্জিন চলে জ্বালানি তেল দিয়ে। সেই তেল পোড়াতে অক্সিজেন লাগে। জ্বালানির সাথে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকলে জ্বালানি ঠিকমতো পোড়ে না। তখন আধাপোড়া কিংবা অব্যবহৃত জ্বালানি বের হয়ে আসে, মিশে যায় বাতাসে। গাড়ির কালো ধোঁয়ায় বেশি পরিমাণে কার্বন ও আধপোড়া জ্বালানি থাকে। গাড়ি থেকে অনেক সময় ধূসর ধোঁয়া বের হয়ে আসে। এই ধূসর ধোঁয়া বের হয় ধোঁয়ার সাথে ইঞ্জিনঅয়েল বা লুব্রিকেন্ট বের হয়ে আসলে।

আবার অনেক সময় কিছু মোটরসাইকেল অথবা টেম্পো জাতীয় হিউম্যান হলার ডিজেলের সাথে ইঞ্জিনঅয়েল মিশায় জ্বালানি কম পোড়ার জন্য। জ্বালানির সাথে ইঞ্জিনঅয়েল মেশালে প্রচুর ধোঁয়া বেরিয়ে আসে। এছাড়া ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, কালো ধোঁয়া বের হয়ে আসে ইঞ্জিন ওভারলোড (বেশি মালামাল বহন করলে) হয়ে চললে, বাল্ব টাইমিং সঠিক না হলে, কমপ্রেসারের চাপ কম হলে। ইনজেকটর ত্রুটিযুক্ত হলে কালো ধোঁয়া বের হবে। পিস্টন রিং ও লাইনার ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও কালো ধোঁয়া বের হয়। সূত্র: নয়া দিগন্ত

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com