রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আবারও নিষেধাজ্ঞা

0

রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আবারও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে সহায়তার কথাও জানিয়েছে দেশটি।

বৃহস্পতিবার ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন বলেছে, অস্ত্র ও রাজস্বে সেনাবাহিনীর প্রবেশাধিকার সীমিত করার লক্ষ্যে মূলত দেশটির সামরিকসংশ্লিষ্ট ব্যবসার ওপর নতুন এ নিষেধাজ্ঞা।

জান্তানিয়ন্ত্রিত স্টার স্যাফায়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজ, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েজ গ্রুপ অব কোম্পানি লিমিটেড (আইজিজি) এবং স্কাই ওয়ান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড নতুন এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে।

যুক্তরাজ্যের এশিয়াবিষয়ক মন্ত্রী আমান্ডা মিলিংও এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাঁচ বছর পর আমরা রোহিঙ্গা জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানের নিন্দা জানাচ্ছি।

৫ বছরের পরিক্রমায় রোহিঙ্গা সংকট : ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী মিয়ানমারের উপকূলীয় রাখাইন রাজ্যে কয়েক ডজন পুলিশ পোস্টে সমন্বিত হামলা চালায়। এতে অন্তত এক ডজন কর্মকর্তাকে হত্যা করে। তারই জেরে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামে ব্যাপক অভিযান চালায়। এআরএসএ সদস্যদের তাড়ানোর অজুহাতে তারা ৪ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। নিহতদের সশস্ত্র যোদ্ধা বলে সামরিক বাহিনী দাবি করলেও সমালোচকরা বলছেন, নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু : ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। যদিও এর আগেই বিভিন্ন সময়ে অন্তত ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। ধীরে ধীরে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে উদ্বাস্তুর তালিকায় নাম লেখায়। যদিও সে সংখ্যা বেড়ে এখন ১১ লাখ ছাড়িয়েছে।

অং সান সু চির নীরবতা ভঙ্গ : ঘটনার পরপরই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। ‘জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ আনেন কয়েকজন বিশ্বনেতা। এসব অভিযোগের পরই নীরবতা ভাঙেন মিয়ানমারের তৎকালীন বেসামরিক নেত্রী নোবেলজয়ী অং সান সু চি। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তিনি এক বিবৃতিতে ‘অধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

সম্ভাব্য ‘গণহত্যা’ : বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২৩ নভেম্বর ২০১৭ শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে সম্মত হয়। তবে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য শর্ত নেই এবং প্রক্রিয়া থমকে আছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান জেইদ রাদ আল-হুসেন ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর সম্ভাব্য ‘গণহত্যার উপাদান’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং একটি আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

আদালত এবং নিষেধাজ্ঞা : ২০১৮ সালের ২৫ আগস্ট হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী তাদের শরণার্থী জীবনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং অন্য পাঁচ শীর্ষ সামরিক কমান্ডারের বিচারের আহ্বান জানান।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা : ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও আরও তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওয়াশিংটন। এরপর প্রায় ৩ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার দিলেও তাদের গ্রহণ করতে নির্ধারিত দিনে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি।

আইনি চ্যালেঞ্জ : ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। তিন দিন পর, হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রোহিঙ্গা নিপীড়নের সম্পূর্ণ তদন্তের অনুমোদন দেয়।

আদালতে অং সান সু চি : ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানিতে অংশ নেন অং সান সু চি। তিনি গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন, ‘সেনাবাহিনী হয়তো অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা বলছে : ২০২২ সালের ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৭ সালের সহিংসতাকে গণতহত্যা বলে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করার প্রচেষ্টার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com