ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ব্যালটে ভোট নেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পরিবর্তে ব্যালটে ভোটগ্রহণে বিএনপি’র দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপি নেতারা ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করেন। এ সময় তারা চট্টগ্রাম-৮ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণে মৃত, প্রবাসী ও কারাগারে আটক ব্যক্তিদের ভোট পড়েছে এমন তথ্য তুলে ধরে ওই নির্বাচন বাতিলের দাবি জানান।
এর জবাবে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ব্যালটে ভোট নেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। আর চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মৃত, প্রবাসী ও কারাগারে আটক ব্যক্তিদের ভোট দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। এমনকি ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে দুটি চিঠি দেয়া হয়। একটিতে চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে তা বাতিল এবং আরেকটি চিঠিতে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি জানানো হয়।
বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে কি ঘটেছে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ হয়েছে এই নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থা অধিকতর খারাপের দিকে যাচ্ছে। উন্নতি তো দূরের কথা অবনতির দিকে যাচ্ছে, ফলে আস্থাহীনতা বাড়ছে। সব কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ১৭০ ভোটকেন্দ্রের সবগুলোই দখল করে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রের বাইরের কেউ থাকতে পারবেন না, গাড়ি-মোটরসাইকেল চলবে না। কিন্তু সেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের সব মেয়র, কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান দৃশ্যমান ছিল। সবাই সরাসরি কেন্দ্র দখল করেছে, মিছিল করেছে। ভোটকক্ষ দখল করে মৃত, প্রবাসী ও জেলে আটকদের ভোটও দিয়েছে।
ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয় তা চট্টগ্রামে প্রমাণিত হয়েছে। কমিশনকে অনুরোধ করেছি চট্টগ্রামের নির্বাচনটি বাতিল করে দিন। ব্যালটের মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন দিন।
ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমীর খসরু বলেন, ইভিএমের ভোটে জালিয়াতি হলেও তা চ্যালেঞ্জের কোনো সুযোগ নেই। কারণ এতে অডিট ট্রেইল ও পেপার ট্রেইল নেই। ভারতের মেশিনে কিন্তু এগুলো আছে।
তারপরও ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি টাকায় ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে। বিশ্বের পাঁচ-ছয়টি দেশে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। সেখানকার নির্বাচন কমিশন বা সরকার প্রশ্নবিদ্ধ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এবং সরকার পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ।
ঢাকার সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। ঢাকার নির্বাচনে তারা (আওয়ামী লীগ) রাস্তার ওপর অফিস করেছে, পোস্টার লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকার খবরদারি চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, বিএনপির বিশেষ অভিযোগের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে যদি কোনো মৃত ভোটারকে জীবিত পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা একটি তালিকা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী তদন্ত করে তাদের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৃত, প্রবাসী বা কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের ভোট দেয়া হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কমিশন। ঢাকার দুই সিটিতে ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ব্যালট পেপারে ভোট করার বা ইভিএম বাদ দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে ইসির পক্ষে সিইসি কেএম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আর বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও চট্টগ্রাম দক্ষিণের বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।