জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি: সিলেটে ক্ষোভ বাড়ছে আরিফসহ চার নেতার

0

মহাসচিবের ‘দরবার’ থেকে ফিরে আসা সিলেট বিএনপির চার শীর্ষ নেতা আরো কঠোর হওয়ার আভাস দিয়েছেন। মাঠে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এখন অনুসারীরা পড়েছেন মামলার মুখে। এই অবস্থায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সিলেট বিএনপিতে ঘটতে পারে যেকোনো অঘটন। হতে পারে গণপদত্যাগের ঘটনাও। তবে এই মুহূর্তে ঝড়ের পূর্বাভাস মিলেছে। দলীয় কোন্দল বাষ্প হয়ে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। নিকট অতীতে সিলেট বিএনপির রাজনীতি এমন কঠিন অবস্থায় পড়েনি বলে জানিয়েছেন সিনিয়র নেতারা। তারা জানান, সিলেট বিএনপির সদস্য সাবেক হওয়া জেলা কমিটি খুব বেশি দিনের হয়নি

কয়েক মাস আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই অবস্থায় কমিটি পুনর্গঠনে হাত দেয়ায় এই জটিলতার তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ১৯ বছর পর ঘোষিত জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি বিএনপির ক্ষোভকে আরো উস্কে দিয়েছে।

গত মাসে সিলেট জেলা বিএনপির পুরাতন কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই সময় আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিলেও কেন্দ্রীয় চার নেতা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, এডভোকেট জামান ও ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর হস্তক্ষেপে সেই ক্ষোভ প্রশমিত হয়। এতে ভূমিকা রেখেছেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক ও ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনাও। ক্ষোভ প্রশমন করে সিলেট জেলা বিএনপিকে পুনর্গঠন করতে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেন। এবারের সিলেট জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে নতুনদের দিয়ে। যাদের বেশির ভাগই সাবেক ছাত্রনেতা। পাশাপাশি সাবেক কমিটির অনেক নেতাও এ কমিটিতে সদস্য হয়েছেন। এদিকে জেলা বিএনপির ক্ষোভ প্রশমিত হতে না হতেই ঘোষণা করা হয় সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি। এই আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে বিরোধ তুমুল আকার ধারণ করে। যারা কমিটিতে এসেছেন তাদের প্রতি ক্ষোভ নেই কারো। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে যুবদলের কমিটি আঁকড়ে ধরে আছেন তাদের কাউকেই কমিটি দুটিতে ঠাঁই দেয়া হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয় সিলেটে।

সিলেট যুবদলের ত্যাগী নেতারা বিচারপ্রার্থী হন কেন্দ্রীয় চার নেতার কাছে। করেন বৈঠকও। সিলেটের বিএনপির দলীয় আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় বৈঠকে কেন্দ্রীয় চার বিএনপি নেতা তাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে নিজেরাই দল থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী গত সপ্তাহে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী তারা পদত্যাগপত্রে সই করে সেটি নিয়ে ঢাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বাসায় দেখা করেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল বিএনপির ওই চার নেতার পদত্যাগ গ্রহণ করেননি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েও দেন। এতে মির্জা ফখরুলের বাসা থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন ওই চার বিএনপি নেতা। তারা মির্জা ফখরুলের কথায় ভরসা রেখে চলছিলেন। কিন্তু শনিবার সিলেটে চার বিএনপি নেতার অনুসারীদের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও মামলা দায়েরের ঘটনায় ফের ক্ষোভ জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে অভিযানের নামে তল্লাশি চালাচ্ছে। আড়ালে চলে গেছেন ক্ষুব্ধ হওয়া নেতাকর্মীরা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল রাজ্জাক জানিয়েছেন, ‘আমরা তো দল ছাড়ছি না। বরং নিজেদের বিসর্জন দিয়ে আমরা সিলেট বিএনপিকে সর্বজনীন করতে চাই। এখানে সবদিক থেকে বাধা পেলে তো কিছু করার থাকবে না। যে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তো আমাদের জন্য দাবি নিয়ে লড়ছি না। আমরা লড়ছি দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের জন্য। এই বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতাদের বুঝতে হবে। এবং আমরা তাদের বুঝাচ্ছিও।’ সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আচরণে মনঃক্ষুণ্ন। জানালেন ‘কে কোথায় থেকে কমিটি নিয়ে আসে। কে কোন কমিটিতে আসছে সেটি আমরা কিছুই জানি না। অথচ স্থানীয়ভাবে বিএনপির সব ঝামেলা আমাদের পোহাতেই হয়। যারা দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে তারা এসে এই ক্ষোভ প্রশমিত করুক। এখানে তারা আসবে না।’ বিগত ১০ বছর ধরে একের পর এক মামলায় আসামি হয়েছেন এড. জামান। মামলা সংখ্যা হবে অন্তত ৩০টি। আসামি থাকায় এই ক’বছরে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়েছেন জামান। এরপরও তিনি মুখ বুজে সব সহ্য করে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আর পারেননি।

দলের কমিটিগুলো সর্বজনীন না হওয়ার কারণে তিনিও প্রতিবাদী হয়েছেন। জামানের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, এডভোকেট জামান সিলেট বিএনপিকে সর্বজনীন করতে নিজেকে বলি দিতে প্রস্তুত। পেশায় ডাক্তার ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীও একাধিক মামলায় আসামি হয়ে কারান্তরীণ হওয়া ছাড়াও এখনো আদালতের বারান্দায় দৌড়াচ্ছেন। সিলেটের এই চার কেন্দ্রীয় নেতা জানাচ্ছেন, পদত্যাগে ব্যর্থ হয়ে তারা সিলেটে ফিরেছেন। এরপর থেকে তাদের অনুসারীরা মাঠে আন্দোলন শুরু করেছেন। কিন্তু শনিবার পুলিশ ন্যাক্কারজনকভাবে বিএনপির কর্মীদের পিটিয়েছে। এরপর শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এ কারণে এ মামলাকে তারা কোনো ভাবে মেনে নিতে পারছেন না। সিলেটের নেতাদের সঙ্গে তারা থাকবেন। প্রয়োজন মতো তারা সব ত্যাগ মেনে নিতেও রাজি আছেন।

জেলা বিএনপির পরামর্শ সভা: সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় টিমের নির্দেশনা ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলার আওতাধীন সকল উপজেলা ও পৌর শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীর সোবহানীঘাটস্থ আগ্রা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে স্ব-স্ব উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতৃবৃন্দকে তাদের সভার সময়ের শিডিউল ও আমন্ত্রণপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই পরামর্শ সভায় যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য সকল উপজেলা ও পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ১ম সহ-সভাপতি, ১ম যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকগণকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলাসমূহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউনিয়ন শাখা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান এবং পৌর শাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচিত দলীয় কাউন্সিলরগণকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। আজ সকাল ১০টায় জৈন্তাপুর উপজেলা, সাড়ে ১০টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা, ১১টায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, সাড়ে ১১টায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, ১২টায় বালাগঞ্জ উপজেলা, সাড়ে ১২টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, ১টায় বিশ্বনাথ উপজেলার সভা। এ ছাড়া বেলা ২টায় ওসমানীনগর উপজেলা, আড়াইটায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা, ৩টায় বিয়ানীবাজার উপজেলা, সাড়ে ৩টায় বিয়ানীবাজার পৌর, ৪টায় জকিগঞ্জ পৌর, সাড়ে ৪টায় জকিগঞ্জ উপজেলা, ৫টায় কানাইঘাট পৌর, সাড়ে ৫টায় কানাইঘাট উপজেলা এবং সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com