‘নিশিরাতে অটো পাস’ আ.লীগ সরকার একটি প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে: রিজভী

করোনাকালীন বিরূপ বাস্তবতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ‘অটো পাস’ দেয়ার পদ্ধতির কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, ‘গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বা আমেরিকাসহ কোনও দেশেই করোনাকালীন বাস্তবতায় অটো পাস দেয়া হয়নি। সকল দেশেই শিক্ষার্থীর মেধার মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষার বিকল্প শুধু পরীক্ষাই রাখা হয়েছে। অন্য কিছু নয়। অথচ বাংলাদেশ চলছে সম্পূর্ণ উল্টো পথে উল্টো রথে। এখানে সব চলছে করোনা ভাইরাসের অজুহাতে। অটো পাস আর ফটোকপির পাস দিয়ে বর্তমান সরকার একটি প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

‘নিশিরাতে অটো পাস’ সরকার বরাবরই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে একেকবার একেকটা নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে দেশের মানুষ আর গণমাধ্যমকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ জানে যে, নির্বাচনে ‘অটো পাস’ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বর্তমান অবৈধ সরকার জোর করে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘এমতাবস্থায়, আমি আপনাদের সামনে জনগণের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গ তুলে ধরতে চাই। সেটি হলো- কোভিড-নাইনটিনের কারণে বিশ্বের সব দেশই একটি অপ্রত্যাশিত সময় পার করছে। কোয়ারেন্টাইন কিংবা লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এখন দেশে চলছে ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি ও প্রতিযোগিতা। করোনা ভাইরাসের কারণে বিকল্প পন্থা অবলম্বন করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় চালু রেখেছে। অনলাইন অথবা অন্য কোনও বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছে। গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বা আমেরিকাসহ কোনও দেশেই করোনাকালীন বাস্তবতায় অটো পাস দেয়া হয়নি। সকল দেশেই শিক্ষার্থীর মেধার মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষার বিকল্প শুধু পরীক্ষাই রাখা হয়েছে। অন্য কিছু নয়।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই শীর্ষনেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ চলছে সম্পূর্ণ উল্টো পথে-উল্টো রথে। সব চলছে করোনা ভাইরাসের অজুহাতে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে রাখা রয়েছে। সরকার সারাক্ষণ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিচ্ছে তাহলে বাসায় থেকে কিংবা অন্য কোনও বিকল্প পদ্ধতিতে কিভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারে, সে ব্যাপারে সরকার কি আদৌ কোনও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে? তা না করে অটো পাস আর ফটোকপির পাস এসব করে সরকার একটি প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ 

রিজভী বলেন, ‘দেশের লক্ষ কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের কোনও ভিশন নেই বলেই লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী অন্ধকারের অতল গহব্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। অথচ অফিস, আদালত, শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন সবকিছুই খুলে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনা নিয়ে সরকার তথ্য গোপন করে অতি সামান্য আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীরা নিরাপদে আইসোলেশনে থেকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। আর সাধারণ মানুষ বিনা চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন, হাসপাতালের বেড ইত্যাদির অভাবে কাতরাচ্ছে। ঢাকাসহ কোথাও আইসিইউ খালি নেই। অক্সিজেনের অভাবে মায়ের কোলেই সন্তান মারা যাচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে করোনা রোগীকে ফেরত দেয়া হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকারের কোনও দায়িত্ব নেই। সরকার যেন চোখ বুজে ধ্যান করছে।’ 

তিনি বলেন, ‘শুরু হলো মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর ক্ষণ গণনা। গণতন্ত্র, সাম্য-মানবিক মর্যাদা-ন্যায়বিচার, এই মূলমন্ত্রে গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম। বিজয়ের এই পঞ্চাশ বছরের যাত্রাকালে দেখছি, রাষ্ট্র ও সমাজে আবারও একদলীয় কর্তৃত্ববাদী নিষ্ঠুর শাসনের উত্থান এবং বেপরোয়া ‘দুর্নীতির উন্নয়নের’ মহামারি। সরকার ব্ল্যাক-আউট করে দিয়েছে সাম্য, মানবিক-মর্যাদা ও ন্যায়বিচার। নিরুদ্দেশ হয়েছে গণতন্ত্র। ভোটাধিকার, মানবাধিকার অন্ধকার গোরস্থানে শায়িত করা হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে বুধবার মহান বিজয় দিবসের বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যথার্থই বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধ করে ‘৭১ সালে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, আর এখন চলছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন।  ভোটাধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন”।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিজয়ের ৪৯ বছর পরও দেশের বর্তমান বাস্তবতা হলো, স্বাধীন দেশের নাগরিকরা নিজ দেশেই পরাধীন। শুধু নিজ দেশে পরাধীনই নয়, ধীরে ধীরে দেশের ভৌগলিক স্বাধীনতাকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। একটি রাষ্ট্র কতটা উন্নত, সভ্য ও টেকসই, সেটি নির্ভর করে একটি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা স্বাধীন তার ওপর। কোনও রাষ্ট্র যদি উল্টো পথে চলার চেষ্টা করে কিংবা সরকার যদি স্বৈরাচারি কিংবা গণবিরোধী হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারকে সঠিক ধারায় ফেরাতে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বাংলাদেশে একজন ব্যক্তির ক্ষমতালিপ্সার কারণে বর্তমানে রাষ্ট্রের প্রতিটি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।’  

বিএনপির এ অন্যতম মুখপাত্র বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে তার একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ বিশ্ববাসী দেখেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর। আমেরিকার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট অসীম ক্ষমতার অধিকারী হলেও দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেখিয়েছে আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে  প্রতিষ্ঠানগুলো প্রেসিডেন্টের চেয়েও শক্তিশালী, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। অথচ বাংলাদেশে ঠিক এর উল্টো চিত্র। নিজেদের সাংবিধানিক দায়িত্ব ভুলে গিয়ে সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com