কাটছে না ডলার সঙ্কট
ডলার সঙ্কটের কারণে বাড়তি মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা হচ্ছে। গতকালও ব্যাংকগুলো বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে প্রতি ডলারে ব্যয় করেছে সাড়ে ৯৮ টাকা। তবে, রফতানিকারকদের কাছ থেকে কিছুটা কম দামে ডলার কেনায় আমদানিকারকদের কাছে গতকাল ব্যাংক ভেদে সর্বোচ্চ ৯৮ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, যেভাবে বর্ধিত হারে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে হচ্ছে এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ডলারের মান আবারো সেঞ্চুরি পার করবে বলে মনে হচ্ছে। এ দিকে প্রয়োজনীয় ডলার না থাকায় ব্যাংকগুলো পণ্য আমদানিতে এলসি খোলা কমিয়ে দিয়েছে। আগের মতো আর আমদানি ঋণপত্র স্থাপন করতে পারছে না। গতকাল বেশ কিছু ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানরা এ কথা জানিয়েছেন।
এ দিকে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকালও আট কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার বিক্রি করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে। এ সুবাদে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরের গতকাল পর্যন্ত ৭৪৩ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে তুলে নিয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় ডলার অনেক কম। এ কারণে সরাসরি ডলারের অন্যতম উৎস বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কাছ থেকে বর্ধিত মূল্যে ডলার কিনতে হচ্ছে। গতকাল বেশির ভাগ ব্যাংক সাড়ে ৯৮ টাকা দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংক এর চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনেছে। বর্ধিত হারে ডলার সংগ্রহের কারণ হিসেবে একটি ব্যাংকের ট্রেজারি হেড গতকাল জানিয়েছেন, প্রতিটি ব্যাংকেরই নিজস্ব গ্রাহক রয়েছে।
এসব গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে ও এলসি সেটেলমেন্টের জন্য ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু ডলারের সরবরাহ কম। গ্রাহক ধরে রাখতেই তাই বর্ধিত হারে রেমিট্যান্স হাউজগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। এ দিকে সব ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য সমান নয়। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন করে থাকে। বর্ধিতমূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করলেও রফতানিকারকদের কাছ থেকে তুলনামূলক কিছুটা কম মূল্যে ডলার কিনে তা সমন্বয় করা হচ্ছে। এভাবে আমদানিকারকদের কাছে ৯৮ টাকায় ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি হারে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে তা বিকল্প পন্থায় করা হচ্ছে। যেমন, কোনো ব্যাংকের তিন দিন পরে ১০ কোটি ডলার প্রয়োজন পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ করার জন্য। এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহক করপোরেট ডিলিংয়ের মাধ্যমে আগাম ডলারের চাহিদাপত্র দিয়ে থাকেন। এর জন্য মুদ্রাবিনিময় হারের ঝুঁকি বিবেচনায় ২ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রিমিয়াম নেয়া হয়। এভাবেই ৯৮ টাকার ডলার ১০০ টাকার ওপরে লেনদেন হয়। তবে, খাতা কলমে দেখানো হয় ৯৮ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নীতিনির্ধারক গতকাল জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনে কম দামে বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করার কিছুই নেই। আমরা দেখব, ব্যাংকগুলো কী মূল্যে ডলার বিক্রি করছে। কারণ, বেশি মূল্যে ডলার বিক্রি করলে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আর আমদানি ব্যয় বাড়লে ঘটবে মূল্যস্ফীতি। এ কারণেই আমরা মূলত ব্যাংকগুলোর ডলার বিক্রির দিকেই নজর দিচ্ছি। তবে, ব্যাংকগুলো বেশি মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করলেও কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে না। রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের মতোই আছে। তিনি জানান, গতকাল ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে রিজার্ভ থেকে।
এ দিকে প্রয়োজনীয় ডলার সংস্থান করতে না পেরে ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না। যেহেতু আন্তঃব্যাংকে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, এ কারণে নিজেদের সংস্থান যতটুকু করতে পারবে ততটুকুই এলসি খোলা হচ্ছে। এভাবে ধীরগতি হয়ে পড়েছে পণ্য এলসি খোলার হার। এ কথাগুলো জানিয়েছেন একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি হেড। তারা জানিয়েছেন, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ব্যাংকের মুনাফায় ও পণ্য সরবরাহের ওপর। কারণ, ব্যাংকগুলোর আয়ের একটি বড় অংশ আসে এলসি কমিশন থেকে। এলসি খোলার হার কমে গেলে ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাবে। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো, পণ্যের সরবরাহ কমে যাবে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে না পারলে সামনে এসব পণ্যের সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে মূল্যস্ফীতিতে।