খালেদা জিয়া কারাগারে রাজার হালে
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। গতকাল বুধবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ‘এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে আদালতের রায়ে খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে তিনি রাজার হালেই রয়েছেন। পৃথিবীর কোনো ইতিহাস নেই যে আদালত কর্তৃক কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামির সেবা করার জন্য একজন কাজের বুয়া দেওয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার সেবার জন্য একজন কাজের বুয়াও কারাভোগ করছেন। আমরা তা দিয়েছি। কারণ আমাদের কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই।’
আর যেন সুদখোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদী, অগ্নিসন্ত্রাসী, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারী ও এতিমের টাকা আত্মসাৎকারীরা ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান, তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া, পুত্র তারেক রহমানসহ পুরো পরিবারই খুনি পরিবার। আর খালেদা জিয়া হচ্ছেন সন্ত্রাসের ‘গডমাদার’। যিনি ঠাণ্ডা মাথায় হরতাল-অবরোধের নামে শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, এর থেকে বড় সন্ত্রাস আর কী হতে পারে? তাঁর (খালেদা জিয়া) মতো বড় সন্ত্রাসী আর কে হতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রায় তিন বছর পর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির এই সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় আওয়ামী লীগের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন ছাড়াও আসন্ন ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের সম্ভাব্য বাজেটের অনুমোদন নেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নতুন নয়, অনেক পুরনো। ক্ষমতায় থাকতে ১৯৯১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খালেদা জিয়ার ‘নি রিপ্লেস’ (হাঁটু প্রতিস্থাপন) করা হয়। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় থাকতে সৌদি আরবেও তাঁর দেহে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই সময় তিনি ওমরা হজ ও মার্কেট করতে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঠাণ্ডা মাথায় হরতাল-অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া জীবন্ত শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করিয়েছেন। সেই অবরোধ-হরতাল এখনো তোলেননি। তাঁর হুকুমে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, কত বোন বিধবা হয়েছে, কত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তিনি (খালেদা জিয়া) তো জেলে আছেন, বেশ ভালো আছেন। কিন্তু তাঁর জন্য কারো কারো মায়াকান্নাও দেখি। কিন্তু তাঁর জন্য মায়াকান্নার আগে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হওয়া পরিবারগুলোর দিকে একবার সবার তাকিয়ে দেখা উচিত। বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, নাশকতা, প্রায় ৫০০ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কথা মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যায় কিভাবে?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে? নির্বাচনের আগে বিএনপি আন্তর্জাতিক সব জরিপ ও দেশের জনগণের মনের কথা বুঝতে পারে যে, নির্বাচনে তাদের জয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই। কারণ দেশের জনগণ তাদের দুঃশাসন ও মানুষ হত্যার কথা ভোলেনি। তাই বিএনপি জেতার জন্য নির্বাচন করেনি, নির্বাচনকে অর্থ বানানোর বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছিল। তারা একেকটি আসনে তিন-চারজন করে মনোনয়ন দিয়েছিল। কখনো লন্ডনে থাকা একজনকে খুশি করে, আবার পল্টনে থাকা নেতাদের খুশি করে কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন, আবার কেউ অনেক বেশি অর্থ দিলেই তা পরিবর্তন করা হয়েছে। যিনি যত বেশি অর্থ দিতে পেরেছেন, তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। তাই এই নির্বাচন নিয়ে তাদের মুখে কোনো কথা মানায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জনগণের শক্তি, সমর্থন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এই দলটির (বিএনপি) জন্ম জনগণের মধ্য থেকে হয়নি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচারের উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই দলটির জন্ম।