ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ: অভিমানীরা জায়গা পাচ্ছেন কমিটিতে
দীর্ঘদিন থেকে কোণঠাসা হয়ে থাকা ত্যাগী নেতা, যারা অভিমানে দল থেকে দূরে সরে আছেন- এবার তাদের ভাগ্য খুলছে। মহানগরের শীর্ষ নেতাদের বলয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে সাবেক হয়ে পড়া এসব রাজনীতিবিদ ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে অগ্রাধিকার পাবেন। বাদ পড়বেন স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কমিটিতে স্থান পাওয়া ও অনিয়মের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সঙ্গে জড়িতরা। ক্যাসিনো সম্পৃক্ততা, চাঁদা ও টেন্ডারবাজি, অনুপ্রবেশকারী, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপকর্মে জড়িতদের স্থান হবে না পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত মহানগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এ নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তিন বছরের জন্য ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হিসেবে শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এসএম মান্নান কচি নির্বাচিত হয়েছেন। দক্ষিণে সভাপতি হিসেবে আবু আহমেদ মন্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন হুমায়ুন কবির।
সূত্রমতে, শনিবার রাতে এ চারজন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা পৃথকভাবে দলীয় সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। কুশল বিনিময়কালে শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ইতঃপূর্বে বাদ পড়া সাবেক নেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে। যারা অভিমান করে ঘরে ঢুকে গেছে, ত্যাগী ও দীর্ঘদিনের নিবেদিত কর্মী, তারা যেন নতুন কমিটিতে অগ্রাধিকার পায়। একই সঙ্গে বিতর্কিত, নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কেউ যেন কমিটিতে ঢুকতে না পারে সে নির্দেশনাও দেন তিনি।
এর আগে ঢাকার দুই মহানগরের নবনির্বাচিত নেতারা ধানমণ্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের নতুন কমিটি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। সদ্যবিদায়ী এ কমিটির উত্তরে একেএম রহমত উল্লাহ সভাপতি, সাদেক খান সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে আবুল হাসনাত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শাহে আলম মুরাদ দায়িত্ব পালন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত তিন বছরে দুই ঢাকা মহানগরের ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে। স্বজনপ্রীতি ও বলয়ভিত্তিক রাজনীতি করতে গিয়ে তারা অভিন্ন মহানগর কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সমর্থনপুষ্ট নেতাকর্মীদের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও মহানগর কমিটি থেকে বাদ দেন। এতে দীর্ঘদিনের অনেক ত্যাগী নেতা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। রাজনীতির মাঠ ছেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। রাজনীতির মাঠে ত্যাগী নেতাদের অভাববোধ থেকে সে সময় আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করেন। পরে বিষয়টি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়ালে বিতর্কিত কমিটি স্থগিত করেন তিনি। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দলীয় সভাপতির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি সদ্যবিদায়ী কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত পথে নতুন কমিটিতে নেতাদের স্থান দেয়া হবে। কোনোভাবেই বিতর্কিত নেতাদের স্থান পাওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া দলীয় প্রধানের বিতর্কিত নেতাদের তালিকায় থাকা নাম বর্জন করে কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। জানতে চাইলে অভিন্ন কথা বলেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচিও। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।