তালুকদার মনিরুজ্জামান সাহেবরা সব সময় আসেন না। পৃথিবীতে খুব ক্ষণজন্মা পুরুষ তারা।

0

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান ছিলেন পরিচ্ছন্ন রাষ্ট্র চিন্তক, গবেষক। ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তার গবেষণা  ও কর্মে তিনি একটি আদর্শ রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। শেষ জীবনে তিনি নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়ে ছিলেন হয়তো কোন কারণে। হয়তো তার চিন্তার বাংলাদেশকে তিনি দেখতে পেতেন না এজন্য তিনি অনেকটা আড়ালে ছিলেন। তার চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে শূন্যতা সৃষ্টি করবে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে এক স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সদ্য প্রয়াত ‘বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, জাতীয় অধ্যাপক তালুকদার তালুকদার মনিরুজ্জামান’-এর স্মরণে এই সভার আয়োজন করে তালুকদার মনিরুজ্জামান নাগরিক স্মরণসভা কমিটি।

স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তালুকদার মনিরুজ্জামান সাহেবরা সব সময় আসেন না। পৃথিবীতে খুব ক্ষণজন্মা পুরুষ তারা। তার চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে শূন্যতা সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, আজকে যে রাষ্ট্র আমরা সবাই মিলে তৈরি করেছি এটাতো একটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ বিষয়টি তালুকদার মনিরুজ্জামান সাহেবের নিশ্চয় একটা দুঃখের কারণ ছিল। এরপরে যে তিনি খুব একটা জনসম্মুখে আসতেন না, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন তার অন্যতম কারণ ছিল এটা। তিনি বলেন, আজকে আমরা যে রাষ্ট্র তৈরি করেছি সেখানে মানুষের কোন অধিকার নেই। সাধারণ মানুষ একেবারেই সাধারণ হয়ে গেছে। আজকে যারা শাসকগোষ্ঠি, তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে এই রাষ্ট্রকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে।

তিনি বলেন, আজকে দুঃখ হয় যখন দেখি যে, আমাদের গুণী মানুষ যারা রয়েছেন তাদেরকে শুধু কথা বলার কারণে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও তারা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন না। যারা লেখেন, কথা বলেন বা যারা শুভ চিন্তা ও সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে চান তাদেরকেও এখন একইভাবে পর্যুদস্ত করা হচ্ছে, নিপীড়ন করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রফেসর তালুকাদার মনিরুজ্জামান সাহেব সেই কথাটি আমাদেরকে শিখিয়েছেন, পড়িয়েছেন যে, কখনো দ্বিমত না করা, লড়াই করে যাওয়া, সংগ্রাম করে যাওয়া। অবশ্যই আমরা জয়ী হব। এদেশের মানুষ সংগ্রাম করেই জয়ী হয়েছে।
তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এম আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে আদর্শ শিক্ষক বলতে যা বোঝায় তালুকদার মনিরুজ্জামান ছিলেন তা। গবেষণা কর্মে তিনি সবসময় সম্পৃক্ত ছিলেন কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদের পেছনে দৌড়াননি, তিনি প্রক্টর হতে চাননি। তিনি হয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক, এই অধ্যাপনাই তার নেশা, তার পেশা এবং আমি মনে করি যে, বাংলাদেশের শিক্ষকরা যদি তালুকদার মনিরুজ্জামানকে অনুসরণ করে তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো অনেক উন্নতি হওয়ার সম্ভব।
স্মরণসভায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ভাসানীসহ বড়রা যা বলেছেন তাদের নাম কি আমরা লই। আজ যা হচ্ছে, তাকে জ্ঞান বলা যাচ্ছে না। জ্ঞানের অভাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট এখন টর্চার সেল। যে রাজনীতি চলছে, তা সবার জন্য লজ্জার ব্যাপার। আজ আপোষের নির্বাচন হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে হবে। পরিবর্তন আমাদের আনতে হবে।

ঢাবি’র সাবেক ভিসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ সভাপতির বত্তব্যে বলেন, তালুকদার মনিরুজ্জামান যে পথ প্রদর্শন করেছেন তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। তিনি যে জ্ঞান চর্চা করেছেন, তা আমাদের উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে হবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, দেশে জ্ঞান চর্চার বন্ধ্যত্ব চলছে। যে সমাজে বন্ধ্যত্ব, সেই সমাজ সুখ সমৃদ্ধ ও উন্নয়ন আশা করতে পারেন না। এ পরিস্থিতির কি পরিবর্তন হবে, জানা নেই। তিনি বলেন, তালুকদার মনিরুজ্জামান ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান মানুষ। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে আগামী একশত বছরে তার মতো লোক পাবো কিনা সন্দেহ।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাগরিক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন, অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন মোল্যা, ঢাবি’র আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ড. সিআর আবরার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন হ এহছানুল হক মিলন, অধ্যাপক আবু সায়ীদ, ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন, আইনজীবী নাজমুল হক নান্নু, রাবি’র শিক্ষক ড. তারেক ফজল, জাবি’র শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল্লাহ খান, অধ্যাপক শামসুল আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, তালুকদার মনিরুজ্জামানের ছেলে ড. সাদিদ প্রমুখ স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম সভা সঞ্চালনা করেন। ধন্যবাদ জানান সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com