অফিসে ঢুকে প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ
রাজশাহীর পবা উপজেলা প্রকৌশলীকে তার কার্যালয়ে ঢুকে মারধর, লাঞ্ছিত এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর পবা উপজেলার প্রকৌশলী মকবুল হোসেন মঙ্গলবার রাতে ঠিকাদার এএফএ আজাদ কামাল ওরফে নতুনসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শাহ মখদুম থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
কিন্তু মামলা দায়েরের পরেও আসামি ঠিকাদার নতুন এবং তার সশস্ত্র সহযোগীরা বুধবার দিনভর পবা উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিষয়টি শাহ মখদুম থানার ওসি মেহেদী হাসানকে জানানো হলেও ঠিকাদার নতুন এবং তার সহযোগীদের ধরছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তারা আবারো যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কা করছেন।
পবা উপজেলা প্রকৌশলী মকবুল হোসেন বলেন, পবার ভুগরইল এলাকার মেসার্স নিউ রিলেশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এফএ আজাদ কামাল ওরফে নতুন পবার বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে পাঁচ কোটি টাকার ওপরে ১০টি কাজ করছেন।
চলতি জুন মাসেই এ অর্থবছর শেষ। এ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার নির্দেশানা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার নতুনের অধিকাংশ কাজই শেষ হয়নি। মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাজ শেষ করার জন্য আমার দপ্তর থেকে বেশ কয়েকবার তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজ করারও অভিযোগ রয়েছে।
এরপরও ঠিকাদার নতুন বিষয়টি আমলে নেননি। প্রত্যেকটি কাজের বিপরীতে তার দেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টি রয়েছে। কাজ শেষ না করায় ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেবার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছি।
প্রকৌশলী মকবুল হোসেন আরও বলেন, এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঠিকাদার নতুন এবং তার ৮-১০জন সহযোগী আমার দপ্তরে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তা বাতিলের দাবি জানান। এছাড়া তিনি বিল দেবার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। আমি অস্বীকৃতি জানালে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ এবং লাঞ্ছিত করেন।
একপর্যায়ে তিনি এবং তার সহযোগীরা আমাকে মারধরের চেষ্টা করেন। এ সময় উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা বাধা দেন। তখন নতুন এবং তার সহযোগীরা আনোয়ার হোসেনকে মারধর করেন। এ সময় ঠিকাদার নতুন আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে ঠিকাদার নতুন এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু তারপরও ঠিকাদার নতুন এবং তার সহযোগীরা বুধবার দিনভর প্রকাশ্যে আমার কার্যালয়ের সামনে ঘোরাঘুরি করেন। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
তবে ঠিকাদার এএফএ আজাদ কামাল নতুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারকে লাঞ্ছিত বা মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সামান্য কিছু কথাকাটাকাটি হয়েছে মাত্র। আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ কেন করা হচ্ছে আমি তা বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে শাহ মখদুম থানার এসআই মেহেদী হাসান বলেন, মামলা দায়েরের পরও আসামিরা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে প্রকাশ্যে ঘুরছে, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না- এ অভিযোগ সঠিক না। প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরির ব্যাপারে প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কেউ আমাকে অভিযোগ করেননি। একজন এসআইয়ের (সহকারী পরিদর্শক) নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন বলে মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, আমরা আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছি। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যেই গ্রেফতার করা হবে।