ছিনতাইকারীরা অধরা, মানুষ নিরাপদে পথচলার গ্যারান্টি চায়!
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে একের পর এক ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। মানুষের কষ্টে উপার্জিত নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা।
এসব ঘটনায় সর্বস্ব খোয়ানোর পাশাপাশি ছুরিকাহতও হচ্ছেন অনেকে। এমনকি ছিনতাইকারীর হাতে কাউকে কাউকে নির্মমভাবে জীবন দিতেও হচ্ছে। অথচ এসব অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট তৎপর নয়। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।
অবশ্য অনেক চিহ্নিত ছিনতাইকারীর হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করেছে পুলিশ, যা থানা পুলিশের খাতায় সন্নিবেশিত। তবে তা ওই পর্যন্তই। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে নেই কোনো কার্যকর অভিযান। তাদের কাউকে গ্রেফতার করা হলেও স্বল্প সময়ে জামিনে বেরিয়ে আসে। তখন তারা হয়ে ওঠে আরও বেপরোয়া। প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
প্রশ্ন হলো, ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের কেন এত অনীহা? অভিযোগ আছে, ছিনতাইয়ের ঘটনা কম দেখাতে চায় পুলিশ। কারণ মামলা বেশি হলে বিপদে পড়েন ওসিসহ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। তাই ছিনতাইয়ের মামলা নিতে চায় না পুলিশ।
ছিনতাইয়ের মামলা করতে গেলে চুরির ধারা দেওয়া হয়। তদবির বা চাপের মুখে মামলা নেওয়া হলেও এক্ষেত্রে আইনের ফাঁক রাখা হয়, মামলা রেকর্ড করা হয় দণ্ডবিধির ৩৯৩ ধারায়। এ ধারায় আইনের ফাঁক থাকায় ছিনতাইকারী সহজেই পার পেয়ে যায়। অথচ ছিনতাই সংঘটিত হলে সুনির্দিষ্টভাবে দণ্ডবিধির ৩৯২ ও ৯৪ ধারায় মামলা দায়েরের বিধান রয়েছে। পুলিশের উচিত এ দুটি ধারায় ছিনতাইয়ের মামলা নেওয়া। বস্তুত পুলিশ তা না নেওয়ায় অপরাধ হিসাবে ছিনতাইকে কার্যত খাটো করে দেখা হয়।
আরও অভিযোগ আছে, পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে অনেক ছিনতাইকারী। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করে উলটো সোর্স হিসাবে ব্যবহার করায় তারা পরিণত হয় আরও বেপরোয়া ছিনতাইকারীতে।
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। জনগণের জানমাল রক্ষা করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এর পরিবর্তে তারা যদি অপরাধীদের দমনে নীরবতা পালন করে অথবা তাদের সঙ্গে নমনীয় আচরণ করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে, এটাই স্বাভাবিক। কার্যত হচ্ছেও তা-ই। ছিনতাইকারীরা কারও পরোয়া করছে না। বরং সাম্প্রতিক সময়ে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, সালাম পার্টি, হ্যান্ডশেক পার্টি ইত্যাদি নানা ধরনের ছিনতাইকারী চক্র গড়ে উঠে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এমনকি তাদের দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্যও। এ ধরনের সব ছিনতাই চক্রকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। কেউ ছিনতাইয়ের কবলে পড়লে থানায় যথাযথ ধারায় তার মামলা নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে ছিনতাইকারীর শাস্তি। মানুষ নিরাপদে পথচলার গ্যারান্টি চায়। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, এটাই কাম্য।