ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দুই সিটিতে ধানের শীষ জয়ী হবে — মির্জা আলমগীর

0

সমস্ত ‘ষড়যন্ত্র’ ব্যর্থ করেই ঢাকার সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হবে বলে প্রত্যাশা করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার এক আলোচনা সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহন নিয়ে আলোচকদের নানা আশঙ্কার জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য আমরা নির্বাচনে গেছি। আমরা যদি জনগণকে একত্রিত করতে পারি তাহলে তাদের (সরকার) সমস্ত ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে আমরা এই নির্বাচনে জয়ী হতে পারবো ইনশাল্লাহ। যদি বলেন, জয়ের জন্যই আমরা নির্বাচনে গেছি, পরাজয়ের জন্য যাইনি।

আগে থেকে আমরা কখনোই বলতে রাজি নই যে, এখানে (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন) আমরা হেরে যাবো। আমরা হারবো না, অবশ্যই আমরা জয়লাভ করবো। আমরা তরুণদেরকে নিয়েছি, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে নিশ্চয়ই আমরা জয়লাভ করবো।

বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের আগে সিটি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যতই চিৎকার করেন, যাই করেন। ৩০ তারিখের ভোট কোনো ভোট নয়। ওই ভোটে ধানের শীষ জিততে পারবেন না। ওরা জিততে দেবে না।

যদি ভোট হতো তাহলে নৌকারই খবর থাকতো না। এখনো আজ অবধি। কিন্তু করতে দেবে না তারা। সেজন্য সমস্ত রকম বুদ্ধি-টুদ্ধি করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের সমস্ত সুযোগ নষ্ট হয়ে গেছে সেইদিন যেদিন বিচারপতি খায়রুল হক সাহেব যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের রায় প্রদান করেছিলেন। এই কথাটা আমরা অনেকেই বলি না। সেই দিন থেকে বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতি অনুযায়ী যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে এবং তার অধীনে যে নির্বাচন পরিচালিত হয় তাহলে সেই নির্বাচন কখনোই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না-এটা আমরা সবাই জানি বুঝি। সেজন্য পরবর্তীকালে আর কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে পারেনি।

দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নির্বাচন কমিশনকে গঠন করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

অনেকের মনে থাকার কথা তখন আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু সঙ্গতকারণেই যেহেতু তাদেরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে, রাষ্ট্রপতিও সেদিন সেটার প্রতি গুরুত্বারোপ করেনি।

সরকারের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ৩৬ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এক লক্ষ বেশি মানুষের মামলা হয়েছে, ৫শর বেশি মানুষ গুম হয়ে গেছে, খুন হয়েছে, প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে। ছোটখাটো বিষয়েও মামলা হয়ে যাচ্ছে। এই সেদিনও আমার বিরুদ্ধে তিনটা মামলা হয়েছে। এগুলোকে ফেইস করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

আমরা প্রতি মুহূর্তেই আন্দোলনের মধ্যে আছি, আমরা যখন কোর্টে যাই সেটা আন্দোলনের একটা অংশ, আমরা যখন আলোচনা সভা করি সেটাও আন্দোলনের অংশ, আমরা যখন নির্বাচনে অংশ নেই সেটাও আন্দোলনের অংশ। আমরা এই আন্দোলনগুলোকে এক সাথে করে নিয়ে বড় একটা আন্দোলনের চেষ্টা করছি। সব সময় যে সফল হবো সেটা বলা যাবে না, তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সফলতার জন্য।

তিনি বলেন, ভুলত্রুটি আমাদের আছে, থাকতেই পারে। সেই ভুলত্রুটি নিয়ে আমরা কিন্তু সরে দাঁড়াইনি। বিশ্ব রাজনীতির যে পরিবর্তন হয়েছে, সেই পরিবর্তনগুলোকে সামনে নিয়ে সেগুলোকে পাশে রেখে আমাদের এগুতে হবে। আমরা আজকে হঠাৎ করে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে চাই না।
আমাদের অভিজ্ঞতা আছে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় এবং ২০১৫ সালের আন্দোলনের সময় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এ্খনো আমাদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা ভীষণভাবে বিশ্বাস করি আমরা সফল হবো। আমরা একটা বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলছি যে, একটা বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি করে যে দানব আমাদের সমস্ত অর্জনকে ধবংস করে দিয়েছে তাকে পরাজিত করতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ইভিএম যে একটা গজব –এটা আমরা সবাই বুঝি। মানুষ যা তৈরি করে তা নিজের জন্য তৈরি করে। নির্বাচন কমিশন যেটা আমদানি করেছেন ওটা ওদের নিজেদের জন্যেই, ওরা ওটাই করবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যে ডাকাতি হয়েছে এটা এই সরকারের একরকম কলংকের টিকা আগামী কয়েক বছরে হতে পারবে না। এখন যে ভোট হচ্ছে একই কায়দায় ভোট করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ তারা ভিন্নপথ নিয়েছে।

ওইভাবে যদি ভোট করতে যেতো তাহলে পুলিশকে মেনেজ করতে হয়, বিজেপিসহ যা যা আছে তাদের সবাইকে টাকা-পয়সা দিতে হয়, রাতের বেলা বিরানি খাওয়াতে হয়, পার্টি দিতে হয়- একদম লজ্জার ব্যাপার। সেজন্য একটা মেশিন বের করা হয়েছে যেটা জাদুর মেশিনই বলা যায়। এখন আপনি বলতেই পারবেন না যে, ওরা ভোট কেড়ে নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমি দুইটা-তিনটা জায়গায় দেখলাম তাদের নেতারা যারা টেলিভিশনে কথা বলেন তারা বলবেন, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হচ্ছে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ঠিকই তো। পোস্টার যে লাগানো যাচ্ছে না-এটাও বলা যাচ্ছে না। বরং বলছে পোস্টারই নেই বিএনপির। সর্বত্র নৌকার পোস্টার। একজন (ক্ষমতাসীন) আবার বলছেন, আমি উনাদেরকে ডাকছি। পোস্টার লাগান আমি দাঁড়িয়ে পোস্টার লাগিয়ে দেবো। ও দাঁড়িয়ে থাকবে আর পেছন দিক থেকে পুলিশ ২/৩ জনকে তুলে নিয়ে যায়।
এই যে একজন বললেন, ভোটের দিন লড়াই করবেন। কী লড়াই করবেন কার সাথে। একটা করতে পারেন যে, মেশিনই ভেঙে ফেলতে পারেন। তা ছাড়া ভোটে জেতার কোনো সম্ভাবনা নাই। দুটার মধ্যে একটা দেবে? ওই ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ে আমি এরকম কথা শুনেছিলাম অন্তত ৭০-৮০টা দেবে। শূন্য ফেলে দিয়েছে, ৭-৮টা তো দিয়েছে। কারণ যিনি দেশ চালান তিনি ভালো করে বুঝেন ৭০-৮০ জনও যদি পার্লামেন্টে যায়, পার্লামেন্ট কোনো সমস্যা তৈরি করবে। অর্থাৎ ঢাকা সিটিতে একজন দেবেন – সেটা আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। এখন যদি ধরেন আপনাদের কাছে কোনো বিশেষ তথ্য থাকে তা তো আমি জানি না। তাছাড়া এটা পাবার কোনো সুযোগ নাই।

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে ‘নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার: বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন।

তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ত্রুটিযুক্ত ইভিএমে ভোট কারচুপির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

সংগঠনের সভাপতি শওকত মাহমুদ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপির হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম বোরহানউদ্দিন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক একেএম আমিনুল হক, সাংবাদিক এম এ আজিজ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

এই আলোচনায় শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com