নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বদামে অসহায় মানুষ

0

সকালের নাস্তায় অনেকেই ভাত খান। ভাত না হলে রুটি কিংবা পরোটা। সঙ্গে থাকে ডাল, ভর্তা। কেউ কেউ ডিম রাখেন। সকালেই সেই সাধারণ নাস্তায় প্রধান উপকরণ হিসেবে থাকে তেল আর পেঁয়াজ। সঙ্গে আবার কেউ সবজিও রাখেন। কিন্তু শীতের সকালের এই অতি সাধারণ মেন্যু নিয়েও অনেকের কপালেই ভাঁজ। কারণ এইসব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। অর্থাৎ দিনের শুরুর খাবার থেকেই পকেট থেকে যাচ্ছে বাড়তি টাকা। গতকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) শ্যামবাজার, নবাবপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল ও সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, ডিম ও সবজির দাম বেড়েছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব বাজারে চাল ভেদে কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। ডিমের দাম ২ টাকা আর তেলের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও কমেনি এর দাম। গত সপ্তাহে কাঁচা পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০ টাকা। সেটি বেড়ে গিয়ে হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আর শীতকালীন কাঁচা সবজির পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের দামের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে সরু চালের কেজি ৪৫ থেকে ৬০ টাকা ছিল, এখন সেটা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তার মানে চালে কেজিতে ৫ টাকা দাম বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে যে চাল ৩৮ টাকা ছিল তা গতকাল ৪৪ টাকা এবং ৪২ টাকার চাল ৫০ টাকা আবার ৪৮ টাকার চাল বাজার ভেদে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। সূত্রাপুর বাজারে ডিম বিক্রি করতে দেখা গেছে, ৩৩ ও ৩৪ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২ টাকা। সয়াবিন তেলের লিটারে ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল (দুই লিটার) বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্যামবাজার। এই বাজারে গতকাল শুক্রবার সকালে এক পাল্লা (৫ কেজি) মুলার ৩৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। অথচ সেই মুলা পাশের সুত্রাপুর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে। আবার ৫ কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। অথচ সেই শিম খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। বেগুন এক পাল্লা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আবার সেই বেগুন বিক্রি করতে দেখা গেছে ৩০ টাকা ৪০ টাকায়। শ্যামবাজারে ৫ কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা। সেই করলা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজার পাইকারি বাজার ঘোরার পর সুত্রাপুর, ওয়ারী, মতিঝিল, সেগুন বাগিচা, নীলক্ষেত খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে পণ্যের দাম কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুন ও তিনগুন। কিছু ক্ষেত্রে চারগুন দামের পার্থক্যও দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচড়া বাজারে দামের পার্থক্য আকাশ পাতাল। দামের আকাশ পাতাল পার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে সুত্রাপুর কাঁচাবাজার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, দামের পার্থক্য থাকবেই। কারণ ৫ কেজি মাল কেনার পর রিকশা ভ্যান ভাড়া রয়েছে, মেনতির টাকা দিতে হয়, ঘাটতি হয়, বিদ্যুৎ খরচ আছে, দোকান ভাড়া দিতে হয়, সবশেষে একেকটি দোকানে দুই তিন জন কাজ করে তাদের বিল দিতে হয়। এরপর দিন শেষে দেখা যায়, সংসার চলে না। খুব বেশি লাভ হয় এমন ধারণা ভুল। যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন বলেন, কাঁচা তরকারির দাম বেড়ে যায় গাড়ি ভাড়ার কারণে। গাড়ি ভাড়া যত বাড়ে বাজারে মালের দাম তত বাড়ে। কমলে বাজারেও কমে। তবে খুচরা বাজারে একটু বেশি হওয়ার কারণ সেখানকার সিন্ডিকেট। কি কারণে খুচড়া ব্যবসায়ীরা বাড়তি দাম নিচ্ছেন তা বলতে পারেননি তিনি। যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে দেখা যায়, মাঝারি মানের ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা, বড় আকারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। অথচ সেই ফুল রাস্তার ধারে খুচরা আকারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ ও ৫০ টাকায়।

পাইকারি বাজারে বাঁধাকপি তিন কেজির আকার ২০ টাকা, ২ কেজি আকারের ১৫ আর এক কেজি ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই বাধা কপি খুচরা বাজারে বড়টা ৪০, ছোটটা ৩০ আর ২৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে মাছের দামে কিছুটা স্বস্তি আছে। যাত্রাবাড়ীতে মাছের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় অনেক কম। গত সপ্তাহে যে মাছ বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি সেই মাছ আজ বিক্রি হয়েছে ২০০ ও ২৫০ টাকায়। ছোট মাছের দামও অনেক কম দেখা গেছে। ছোট বাইন, মলা, কাচকি মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। টেংরা ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। মাঝারি মানের ইলিশ মাছ ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া স্বস্তি রয়েছে ধনে পাতা, কাচা মরিচ, গাজর, ওল কপি আর বিভিন্ন ধরণের শাকে। ২০ টাকা কেজি ধনে পাতা, ৪০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ, ২০ টাকা কেজি ওলকপি ও গাজর এবং ৫ টাকায় এক মুঠো শাক পাওয়া যাচ্ছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com