স্বাধীন দেশের সংবিধানকে স্বাধীন করতে হবে
মাদক ব্যবসায়ী আর অ’দলীয় সন্ত্রাসীদের দমন করতে ক্রসফায়ার সেই কবেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে,। এখন ধর্ষকদেরও গুলি করে মারার বৈধতা দেয়ার দাবি উঠেছে,। স্বয়ং সংসদে আগেও এরকম আরও কিছু ইস্যুতে কথিত আইনপ্রণেতাদের তরফে বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের জোর দাবি উত্থাপিত হয়েছে,। কিছুদিন আগে এমনকি এদেশের রাষ্ট্রপতিকে খাদ্যে ভেজালকারীদের দমনে গণপিটুনির মতো বিচারবিহীন খুনখারাবির আহবান জানাতে দেখা গেছে,। এবং অপরাধ দমনে এইসব চটজলদি সমাধানকে কেবল তারাই সমর্থন করছেন এমন নয়, দেশের বিরাটাংশ মানুষ এ ব্যবস্থাকে একমাত্র বিধেয় ও উপযুক্ত মনে করে,। এবং প্রতি ক্ষেত্রেই কমন যুক্তি হিসেবে যে বাস্তবতা কাজ করে সেটা হচ্ছে, প্রচলিত আইনকানুন ও বিচারের কাঠামোতে এইসব অপরাধীর প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে বছরের পর বছর লেগে যায়, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়,। কথা হচ্ছে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর আছে এরকম দাবিকে সত্য দাবি করেও এই স্বীকারোক্তি দেয়া যায়,। কারণ, এটা প্রচলিত আইন আদালতেরই দায়;
আইন আছে, আদালত আছে, তবুও অপরাধীরা নির্বিচার- অপরাধীদের ক্ষেত্রে এই সুযোগ এবং সাধারণের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বিদ্যমান আইন আদালতই বহাল রেখেছে,। বলা যায়, একারণেই শোষণের স্বার্থে সৃষ্ট ব্রিটিশদের সেই আইনকানুন ও বিচার ব্যবস্থাকে পাকিস্তানের মতো করে বাংলাদেশও প্রতিপালন করছে,। দলের স্বার্থে, দলীয় কিছু লোককে বাঁচিয়ে দিতে গিয়ে এখন তাই বাকিদের মেরে ফেলার অবস্থা তৈরি হয়েছে,। একদিকে, এলাকার বড় বজ্জাত ব্যক্তিটার বড় নেতা হয়ে যাওয়া বাকিদেরও বজ্জাত হতে ইন্ধন যোগাচ্ছে,। অন্যদিকে, উদ্দেশ্যমূলক আইনের ফাঁক গলে বাজপাখিরা উড়ে যাবার পর ছোট ছোট কীটপতঙ্গও অনেকে অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে,। একারণে, আইন থাকলেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কিংবা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকলেও সেই আইনের কার্যকারিতা এরকম ব্যর্থতায় পৌঁছে দিচ্ছে আমাদেরকে,।
নিঃসন্দেহে এ সংকটে সমাধান চাইলে বিদ্যমান আইন ও বিচার কাঠামোর সংস্কার দরকার হবে, শিকড় সন্ধানে শরণাপন্ন হতে হবে দেশের সর্বোচ্চ আইনের- রাষ্ট্রের সাথে তার নাগরিকের সম্পর্কের সনদ সংবিধানের,। কেননা রাষ্ট্র পরিচালনার বিভাগ তিনটিকে এক ব্যক্তি বা এক দলের নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন করার শক্তি সংবিধানেরই থাকে,। শোষণকামী কলোনিয়াল লিগ্যাসির কপি পেস্ট নয়, স্বাধীন দেশের সংবিধানকে তাই স্বাধীন করতে হবে সবার আগে,।