নির্বাচনকে ঘিরে ‘নীলনকশা’ হিসাবে নতুন নতুন কালাকানুন তৈরীতে ব্যস্ত সরকার: রিজভী

0

আওয়ামী সরকারের জন্য প্রলয়-দিন ঘনিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন,’আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নীলনকশা হিসাবে নতুন নতুন কালাকানুন তৈরীতে ব্যস্ত এই নিশিরাতের সরকার। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও অন্যমাধ্যম গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল মাধ্যম ও ওভার দ্য টপ (ওটিটি) মাধ্যমের জন্য নতুন একটি বিধান বা নীতিমালা তৈরি করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

রিজভী বলেন, ‘২০১৮ সালেও জাতীয় নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে তড়িঘড়ি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়। এবারও আরেকটি নতুন কালাকানুন তৈরীর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা হবে আরও ভয়ঙ্কর। বিরোধীতা দুরে থাক, জাতীয় জীবনকে নেতিয়ে পড়ার দিকে ঠেলে দেয়ার কৌশল হিসেবেই এই কালাকানুনগুলো তৈরী করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন অত্যাচারী আততায়ীর আঘাতে ছিন্নভিন্ন। নিজের আত্মসম্মানে জাগ্রত হয়ে জাতি সবসময় চিরসজাগ থেকেছে, আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধেও এদেশের মানুষ নিজেদের জীবন-জীবিকা রক্ষার প্রয়োজনে রাজপথে ধেয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।আওয়ামী সরকারের জন্য প্রলয়-দিন ঘনিয়ে এসেছে।

সোমবার (১৬ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দেশে জনগণের অবস্থা করুণ ও মর্মান্তিক। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আলোর গতিতে দৌড়াচ্ছে। গম আমদানি করা যাচ্ছে না, কারণ রপ্তানিকারক দেশ গম রপ্তানি বন্ধ করেছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যাওয়ার পর কয়েকদিনের মধ্যে আটা ক্রয় করা অসম্ভব হবে সাধারণ মানুষের জন্য। সিন্ডিকেটের দৌরাত্বে খাদ্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বমূখী গতি থামছেই না। খাদ্যপণ্য নিয়ে সবধরণের গভীর সংকটে বাংলাদেশ। উজানের পানি এবং বাঁধ ভেঙ্গে বাংলাদেশের এক বিস্তৃত অঞ্চলের ধান তলিয়ে গেছে। কৃষককুল দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সারাজাতি আকুল উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে। বাংলাদেশে এক দুর্বিষহ সংকট প্রচন্ড গতিতে ধেয়ে আসছে। বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে দেউলিয়াত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশের অবস্থা আরও সংকটাপন্না। অর্থনৈতিক চরম দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ নিরিবিলি কেঁদেও শান্তি পাবে না।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কায়েম এবং অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে অনির্বাচিত নিশিরাতের সরকার। ডিফেমেশন ল’, অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট, কনটেম্পট অব কোর্ট, আইসিটি অ্যাক্ট, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, গণমাধ্যমকর্মী আইন, ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট এবং ওটিটি আইনসহ অনেকগুলো নিবর্তনমূলক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গোরস্থানে কবরের মধ্যে শায়িত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে দিয়ে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী এই সরকার মনে করে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ গণমাধ্যম। স্বার্থপর হিংসুটে সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা শুনলেই উন্মাদ হয়ে উঠে। গণমাধ্যম যাতে ভীতি-আতংকের মধ্যে থাকে অনির্বাচিত সরকার সেইরকম একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নিশিরাতের সরকার এমন আইন করছে যাতে কোনোভাবে বিরোধীদের কণ্ঠ প্রকাশ না পায়। অর্থাৎ টেলিভিশন থাকবে, পত্রিকা থাকবে, অনলাইন-সোস্যাল মিডিয়া থাকবে কিন্তু সত্যকে অন্ধ ও বোবা হয়ে থাকতে হবে। কার্যতঃ বাংলাদেশকে বিধি-নিষেধের কাঁটাতারে আটকাতে আটকাতে একেবারে একদল, একদেশ, এক নেতা করা হয়েছে সেই ’৭৫ এর মতো।

রিজভী বলেন, ‘প্যারিসভিত্তিক সর্ববৃহৎ ও প্রভাবশালী সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ফ্রন্টিয়ার্স (আরএসএফ) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনমন ঘটেছে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৬২তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে তলানীতে। এমনকি তালেবান শাসিত আফগানিস্তানেরও নীচে।

গত বছরের ৫ জুলাই রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ২০২১ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটর্স’ বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারী ৩৭ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের যে তালিকা প্রকাশ করেছিলো, তাতে দু’জন নারী ছিলেন। তাদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তালিকাটিতে দু’টি ভাগ করা হয়। লাল ও কালো। বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ সংবাদমাধ্যম শিকারি ১৬ জনের ‘কালো’ তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান। কতটা ভীতিকর ও নাজুক পরিবেশে থাকলে আরএসএফের প্রতিবেদনটি পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মূলধারার গণমাধ্যম প্রকাশ করতে সাহস পায়নি। যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুর কাছে গণমাধ্যমকে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘গতকাল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও (ইইউ) বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে স্বাধীন গণমাধ্যম এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। দেশের বিচার ব্যবস্থা এখন একচক্ষু হরিনের মতো। আর সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর মাফিয়া আগ্রাসন চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। কারসাজি করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটছে দলটি। গত ১৩ বছরে জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরস্পর শত্রুপক্ষ। এটি স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে যেমন সত্য ছিল, এখনো একই অবস্থা বিরাজমান। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলে সংবাদপত্র থাকে না আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলে আওয়ামী লীগ থাকে না। ফলে দেশে বর্তমানে রেডিও-টিভি কিংবা সংবাদপত্র স্রেফ নিশিরাতের সরকারের প্রেস উইংয়ে পরিণত করার যাবতীয় কার্যক্রম চলে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশে বর্তমানে নিশিরাতের সরকার র‌্যাব-পুলিশ এবং আদালতের ভয় দেখিয়ে অঘোষিতভাবে একটি ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী নীতি প্রণয়ন করেছে সেটি হলো-‘শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের কারো বিরুদ্ধে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে কিছু লেখা যাবেনা’। এই নীতির বাইরে বেরুনোর চেষ্টা করলেই সে রাষ্ট্রযন্ত্রের জুলুম ও হয়রানির শিকার হয়। যেহেতু গণতন্ত্র হত্যাকারী জল্লাদ’রা ক্ষমতায়, তাই এই আতঙ্কের পরিবেশে বিবেকের তাড়নায় স্বাধীনভাবে কেউ কিছু লিখতে বা বলতে চাইলে তাকে নিরুদ্দেশ হতে হবে, না হলে কারাগার হবে তার স্থায়ী ঠিকানা। বাংলাদেশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যত মামলা হয়েছে তার শতকরা অর্ধেকের বেশি মামলা হয়েছে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। এই মামলা থেকে নারী-শিশু ও কিশোর’রাও রক্ষা পায়নি। স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী এ ধরনের অপতৎরতা রুখে দিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নারায়নগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com