পিকে হালদারের থাবায় নিঃস্ব অনেকেই, চুষে নিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ
প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের থাবায় নিঃস্ব অনেকেই। তিনি চুষে নিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ। দায়িত্বে থেকেই আত্মসাৎ করেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের অর্থ। দখলে নিয়ে লুটপাট করেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং পিপলস লিজিংসহ চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ভুয়া কোম্পানি খুলে ঋণের নামে হাতিয়ে নেন সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। সব প্রতিষ্ঠানই ভুগছে আর্থিক সংকটে। এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপির হার ৯০ শতাংশের বেশি। গ্রাহকের জমানো টাকা ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। টাকা ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আমানতকারীরা।
আমানত হারিয়ে পথে বসার উপক্রম রোমানা ইয়াসমিন জানান, আমরা নিদারুণ কষ্টে আছি। বাচ্চাদের স্কুলে দিতে পারছি না। নিজের চিকিৎসা করাতে পারছি না। সংসারের খরচ চালাতে পারছি না। আমানত খোয়ানো আব্দুর রহিম বলেন, বছরের পর বছর টাকা ফেরত না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমরা যাতে টাকা ফেরত পাই সেজন্য সরকারের কাছ থেকে যথাযথ ভূমিকা আশা করছি।
লুটপাটের শিকার পিপলস লিজিং পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুনর্গঠন করা হয় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদগুলোও। কর্তৃপক্ষ বলছে, বেশিরভাগ ঋণেরই জামানত নেই। কাগজপত্র ঠিক নেই। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন জানান, কোনো রুলস-রেগুলেশন মানা হয়নি। কেবল পর্ষদে নিজের লোকদের বসিয়েছিল পিকে হালদার। যেখানে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল সেখানে ম্যানেজ করা হয়েছে। অত্যন্ত সুকৌশলে পরিকল্পনা করে এ কাজ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুনই মানা হয়নি।
এদিকে পিকে হালদার ভারতে গ্রেফতার হওয়ায় কিছুটা হলেও আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। তার কাছ থেকে টাকা এবং সম্পদ উদ্ধার করতে পারলে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পিপলস লিজিংয়ে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, পিকে হালদারের কাছ থেকে সম্পদ বা টাকা উদ্ধার করতে পারলেই আমরা গ্রাহকদের ফেরত দিতে পারব। অন্যথায় সম্ভব নয়। তিনি বলেন, লুট হওয়া অর্থে পিকে হালদার দেশে যে সম্পদ গড়েছেন সেসব বিক্রি করলে হয়তো আমরা ৩শ থেকে ৫০০ কোটি টাকা পাব। কিন্তু সেটি দীর্ঘসূত্রী একটি ব্যাপার। ওই কর্মকর্তা বলেন, লুট হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন একটি স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে। অর্থের বিনিময়েই গতি আনতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পিকে হালদারের একার পক্ষে এতগুলো প্রতিষ্ঠান লুটপাট করা সম্ভব ছিল না। তাকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে ভবিষ্যতে তারা হয়তো অন্য আরও অনেক পিকে তৈরি করবেন। যেসব প্রতিষ্ঠান নজরদারির দায়িত্বে আছে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, আইনের কোনো ফাঁক আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।