প্রেসব্রিফিং —

0

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৬, ২০২০, রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয়কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের প্রেসব্রিফিং এর পূর্ণ বক্তব্য।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক উষ্ণ শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

এদেশের জনগণের প্রাণাধিক প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রাণনাশের উদ্দেশে প্রায় দুই বছর যাবত বিনা অপরাধে বন্দী রাখা হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় তাঁকে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। ৭৫ বছর বয়স্ক দেশনেত্রীর জীবন প্রতি মূহুর্তে শংকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের মদদে তাঁর গুরুতর অসুস্থতা গোপন করা হচ্ছে। তিনি এখন কি অবস্থায় আছেন তা কাওকে জানতে দেয়া হচ্ছে না। গণতন্ত্রের পুণ:প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতায় তিনি কি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছেন সেটি নিয়ে দেশবাসী উৎকন্ঠিত। তাঁর সাথে স্বজনদের দেখা সাক্ষাত করতে দেয়া হচ্ছে না। তাঁর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী ও পাতি নেতারাও কুৎসিত ‘ডার্ক হিউমার’ করে যাচ্ছেন। পিজি হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড তাঁর স্বাস্থ্য সম্বন্ধে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে তাঁর বর্তমান অবস্থায় এডভান্স চিকিৎসা দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বারবার জোরালোভাবে দাঁড়ানো এই নেত্রীকে কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না সরকার ও সরকারপ্রধান। এজন্য এক দুর্বিষহ মাষ্টারপ্ল্যান নিয়ে সরকার কাজ করছে।

বর্তমান সরকারপ্রধান মতভিন্নতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেন বলেইা দেশনেত্রী আজ কারাগারে। দেশনেত্রীকে বন্দী রাখা দেশ-কাল ও সভ্যতার পক্ষে কলঙ্কের। সেই কলঙ্ক অক্ষুন্ন রাখার দায়িত্ব নিয়েছে ক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী সরকার। একজন বয়স্ক, গুরুতর অসুস্থ মহিলা হিসাবে প্রচলিত আইনে তাঁর জামিন অগ্রাধিকারমুলকভাবেই প্রাপ্য। তাঁর প্রায় দুই বছর সাজা খাটা হয়ে গেছে। জেলখানায় যারা একাধিক বছর কারাভোগ করেন তাদের সাজার কার্যকারিতা শর্তহীনভাবে নানাবিধ বিবেচনায় স্থগিত করা হয়। প্রতিহিংসার পথ পরিহার করে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে।

সচেতন সাংবাদিক বন্ধুগণ,
ইভিএম দিয়ে ডিজিটাল ভোট ডাকাতির মহড়া হলো গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনের শুন্য আসন এবং হাইমচরের উপজেলা নির্বাচন ভোটে। ওটা ছিল প্রস্তুতি ম্যাচ। সেখানে প্রমান হয়েছে ভোটার ছাড়াই ইভিএমে নৌকার প্রার্থীদের কিভাবে পাশ করানো সহজ। গত ২৯ ডিসেম্বরে মিডনাইট ইলেকশনের পর গোটা বিশ্বের নিন্দা ও ধিক্কারের ঝড় সামলাতে না পেরে এই অবৈধ গণবিচ্ছিন্ন সরকার দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিদ্ব্যৎজন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং সরকারী দল ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি থোড়াই কেয়ার করে ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোট ডাকাতির কৌশল নিয়েছে। তারা জানে, এখন কোন নির্বাচনের আগে রাতে ভোট দেওয়া শুরু করলে আর কেউ না হোক সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে যাবেন। অতএব এবার তাদের আরেকটি নতুন পন্থা উদ্ভাবন করতে হয়েছে। সেটা হলো এই ইভিএম। এটাই বিস্ময়কর।

স্বার্থলোভী ভেকধারী ক্ষমতাসীনরা হঠাৎ ইভিএম-কে সুষ্ঠু ভোটের মেশিন বলে অভিহিত করছেন কেন ? যারা ভোটের আগের দিন রাতে পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে ভোটের বাক্স পূর্ণ করে, যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নোমিনেশন ফরম জমা দিতে দেয় না, যারা কেন্দ্র দখল করে ভোটারদেরকে ভোট প্রদানে বাধা দেয় এবং এজেন্টদের বের করে দেয়, যারা ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারছাড়া গরু-ছাগলের বিচরণ নিশ্চিত করেছে, যারা ভোটের নামে শুধু নিজেদেরকেই বিজয়ী ঘোষনা করে, যারা নির্বাচনের প্রসাধনী মুখে মেখে ভোটারদের ভোট লুট করে, যারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ওপর আক্রমণ করে মাইক ভেঙ্গে ফেলে ও পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলে, যারা একতরফা নির্বাচন করার জন্য তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মৃত মানুষ থেকে শুরু করে জীবিত লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয় ও গ্রেফতার করে, তারা কি কোন মহৎ উদ্দেশ্যে ইভিএম চালু করছে ? এটি হলো মধ্যরাতের নির্বাচনের মতো ভোট ডাকাতির আরেকটি কৌশল। এটা হলো ভেল্কিবাজির মেশিন। ইভিএম হলো মহাপ্রতারণার নতুন পদ্ধতি। এতে ডিজিটাল ডাকাতির পর অভিযোগ করারও সুযোগ নেই। মামলার সুযোগ নেই, একজন ভোটার কোথায় ভোট দিলেন জানারও সুযোগ নেই। তাহলে এর চেয়ে ভোট চুরির বড় মাধ্যম আর কী হতে পারে ?

কার্যত: ইভিএমে সুষ্ঠু ভোটের ন্যুনতম সুযোগ নেই। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনও চট্টগ্রামের মতো দখলের নীলনক্শার প্রস্তুতি কি না তা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঢাকাতেও সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রচারণার সময়ে গ্রেফতার অভিযান করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এখন গ্রেফতার চলছে, অভিযানও চলছে, আক্রমণ চলছে, হামলা চলছে এবং হামলার মাধ্যমে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ তারা সৃষ্টি করেছে। প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে সরকারী দলের প্রার্থীরা। ধানের শীষের পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলছে সন্ত্রাসী। বেছে বেছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাও নিয়োগ দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসাবে দায়িত্বে থাকবে সরকারের আস্থাভাজন চিহ্নিতরা।

প্রিয় বন্ধুরা,
আপনারা দেখেছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপ-নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট ডাকাতি উৎসব। চট্টগ্রামে ডিজিটাল ভোট ডাকাতির প্রস্তুতি ম্যাচ সম্পন্ন করেছে অবৈধ হাসিনার সরকার। আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং সরকারের পেটোয়া বাহিনী সবগুলো ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়ে নি:শব্দে, নিভৃতে এবং নীরবে ইভিএমে ভোট ডাকাতি করেছে। এবার ৩০ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোট ডাকাতির প্রস্তুতি চলছে ঢাকার দুই সিটিতে। চট্টগ্রাম উপ-নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণে অনিয়ম, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, কেন্দ্র দখল, ধানের শীষের সমর্থকদের ওপর হামলা হলেও আজ্ঞাবহ নির্লজ্জ নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করেনি। মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পড়লেও দেখানো হয়েছে ২২ শতাংশ ভোট হয়েছে। ভোট শুরুর পর থেকে ১৭০টির সব কয়টি কেন্দ্রের দখল ছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সন্ত্রাসী বাহিনীর। বরং সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে সাফাই গেয়েছে ভোট ডাকাতির সহযোগী নির্বাচন কমিশন। সরকারের চরম সুবিধাভোগী দালাল সিইসি কে এম নুরুল হুদা সুষ্ঠু নির্বাচনের সজ্ঞায় যেন ভুলে গেছেন।

চট্টগ্রাম উপ-নির্বাচন ও হাইমচরে ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের উপস্থিতিতে নৌকার লোকজন ইভিএম এর গোপন বুথে অবস্থান নেয়। ভোটাররা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর ব্যালট ইউনিটে নৌকার লোকজন নিজেদের প্রতীকে ভোট দিয়ে দেয়। এভাবে নির্বাচনের নামে জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে সরকার তামাশা করেছে। সবকটি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া, গোপন বুথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা ভোট প্রদান করেছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, যুবদল নেতা খোরশেদ ও রফিকের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছিলো আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এছাড়া ভোটের আগের রাত থেকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বে জনগণের ভোটাধিকার হরণের মঞ্চায়ন হয়েছে চট্টগ্রামে।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
আমরা আশংকা করছি চট্টগ্রামের মতো ঢাকার দুই সিটির ভোটেও ভোটের আগে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি, হামলা আর ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে। ধানের শীষের প্রার্থীর সমর্থক ও ভোটারদের প্রতিনিয়ত নিগৃহীত করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপ-নির্বাচনের মতো সরকারের বিশ^স্ত ভাঁড় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ঢাকাতেও নিজের তেলেসমাতি অক্ষুন্ন রাখবেন কি না সেটি নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দীর্ঘ হচ্ছে। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের ভোট ডাকাতি উপহার দেয়ার জন্য মুচলেকা দিয়ে শেখ হাসিনার কাছ থেকে দামি বিএমডব্লিউ পেয়েছিলেন সিইসি হুদা। ।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি’র সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজকে লালবাগ কেল্লার মোড় থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আগামী ৩০ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীসহ সমর্থকদের ওপর চলছে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া হামলা-নির্যাতন। গত ১৩ জানুয়ারী ২০২০, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে গায়ের জোরে পরাজিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের যৌথ হামলা ও সন্ত্রাস এবং এতে নির্বাচন কমিশনের নির্বিকার থাকা প্রমান করেছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকেও তারা কলুষিত করতে চায়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর চলছে জুলুম-নির্যাতন। মীর নেওয়াজও সেই জুলুমের শিকার।

বিএনপি’র সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলীকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com