বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপরে হামলা হলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে: মির্জা আব্বাস

0

বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপরে আর হামলা হলে ক্ষমতাসীনদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপিসহ বিরোধী দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মগহানগর এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে প্রেসক্লাবের আশে পাশে জড়ো হতে থাকেন। এক সময়ে প্রেসক্লাব এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। সকলের মুখে সরকার বিরোধী সেøাগান ছিল। একই দাবি সরকারের পদত্যাগ। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।  বিএনপি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামী শনিবার সারাদেশে জেলা পর্যায়ে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমাদের আর কারো ওপরে হামলা হলে, কারো ওপরে জুলুম হলে আমরা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়বো- কাউকে বিন্দু মাত্র ছাড় দেয়া হবে না, সমুচিত জবাব দেয়া হবে। আজকে ড. খন্দকার মোশাররফ সাহেবের বাসায় হামলা হয়েছে, রেদোয়ান সাহেবের ওপর হামলা হয়েছে, আরো যাদের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা আশা করছি যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে ইনশাল্লাহ এই প্রতিরোধ ও প্রত্যাঘাতের মাধ্যমেই আমরা আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাবো।

মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, কয়েকদিন আগে তথাকথিত বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা দেয়া হবে না। এই কথা যেদিন বললেন, তার ঠিক পরদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেবের বাড়িতে হামলা করা হলো ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে। এরপরে রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলা করা হলো, বাংলাদেশে ১০/১২টি জায়গায় হামলা করা হয়েছে ঈদ পুনর্মিলনী উৎসবে। এই যে কর্মকান্ডগুলো করলো প্রধানমন্ত্রী বলার পরে এই ধরনের ঘটনা কী করে ঘটলো? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ-আদেশ অথবা অনুরোধের পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটলো। অর্থাৎ এদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কিংবা চোর-বাটপার-লুটেরা আজকে প্রধানমন্ত্রীর কথাও শোনে না। তা নাহলে কেনো খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে হামলা হবে, কেনো রেদোয়ানের গাড়িতে হামলা হবে?

তিনি বলেন, খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে হামলা হয়েছে। সেখানে কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ উত্তম-মধ্যম খেয়েছে, রেদোয়ানের ওখানে হামলা হয়েছে সেখানেও কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ উত্তম-মধ্যম খেয়েছে। অর্থাৎ প্রতিরোধ শুরু হয়ে গেছে। এখন প্রত্যাঘাত করতে হবে তাদেরকে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদসহ বিএনপি ও  বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেয়।

মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচন কমিশনার বলনেছ, আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি ইভিএমে করব না স্বাভাবিক করবো। ওই দিকে প্রধানমন্ত্রী বলে ফেললেন যে, তিনশ সিটে ইভিএমে নির্বাচন হবে। তাহলে আমরা আজকে বলছি যে, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না-ওই কথা প্রমাণ হয়ে গেলো। হাসিনা সরকারের অধীনে, আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এটা আমাদের বক্তব্য। বিভিন্ন পত্রিকায় দেখি কত আসন, এতো আসন। আসন যারা ভাগ করছেন আমরা আপনাদের পা টা ভাগ করে দেবো। আসন ভাগের নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না, কোনো আঁতাতের নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেয়া হবে না-কথাটা মনে রাখবেন। ১৯৮৬ সালের মতো যারা এবারো শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবে তারা ‘জাতীয় বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেন, মান্না সাহেব (মাহমুদুর রহমান মান্না) বলেছেন, যারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে। এই কথাটা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানের জনসভায়। তিনি বলেছিলেন, এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে। কিন্তু বলার পরে তিনি ঠিকই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি নিজেকে জাতীয় বেঈমান হিসেবে প্রমাণিত করেছিলেন। এবারো যারা নিজেকে জাতীয় বেঈমান হিসেবে প্রমাণ করতে চাইবে ইনশাল্লাহ আমরা সরকার এবং তাদের বিরুদ্ধে একযোগে ব্যবস্থা নেবো। আগামী আন্দোলনে সকলকে একযোগে কাজ করার প্রস্তুতি নিতেও বলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই নেতা। শ্রীলংকা প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, শ্রীলংকায় আজকের এই অবস্থাটা কেনো হলো? কারণটা হলো চুরি। শ্রীলংকা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হয়ে গিয়েছিলো, শ্রীলংকা ঋণ নিতো, সেই ঋণের টাকায় মেগা প্রকল্প করতো আর মেগা প্রকল্পের টাকা বিদেশে পাচার করতো। এ কারণে সেখানে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে, মানুষজন নিঃস্ব হয়ে গেছে। আপনারাও (বাংলাদেশ সরকার) কিন্তু এই কাজগুলো (মেগা প্রকল্প) স্টপ করছেন না। এখনো ১২টি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞরা ওই সমস্ত মেগা প্রকল্পের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন যে, এই সব প্রকল্প হলে বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো হতে পারে।

মির্জা আব্বাস বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আমরা কয়েকবার সভা করেছি। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। আমরা জানি যে, সাধারণ সরকার দ্রব্যমূল্য বেঁধে দেয় জনগণের সুবিধার্থে। আর এই সরকার তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। এই যে টাকা কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে দেশের মানুষ তা জানতে চায়। আবার তারা (সরকার) বলে কি জানেন, দেশে নাকি মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে- দুই হাজার ৮শ ৮২ টাকা। কার কি আয় বেড়েছে আমি জানি না তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আওয়ামী লীগের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে গেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আওয়ামী লীগের বাইরে যারা আছে তারা যে না খেয়ে আছে এতে কোনো সন্দেহ নাই।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com