দুদকের সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছে প্রশান্ত কুমার!
শেখ হাসিনার কথিত উন্নত বাংলাদেশে এখন দুর্নীতি-লুটপাট ও অর্থআত্মসাতের মহোৎসব চলছে। শুধু সরকারি অর্থনৈতিক খাতে নয়, বেসরকারি খাতের বড় বড় কোম্পানিগুলো থেকেও উধাও হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। মূলধন হারিয়ে কোম্পানিগুলো এখন পথে বসেছে। বাণিজ্যিক খাতের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকার নিজেদের পছন্দের যেসব লোককে বসিয়েছিল মূলত তারাই বিভিন্ন কৌশলে এসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এসব কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব দুর্নীতিবাজদেরকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করছে কথিত দুর্নীতি দমন কমিশনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এমনকি বড় বড় দুর্নীতিবাজদের দেশত্যাগে দুদক চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা সরাসরি জড়িত। স্বাস্থ্য খাতের টাকার কুমির হিসেবে পরিচিত সেই আবজাল দম্পতি দুদকের সহযোগিতায়ই দেশত্যাগের সুযোগ পেয়েছিল। এমনকি তাদের একাধিক ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করার পরও তারা এসব একাউন্ট থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় থাকা সত্ত্বেও দুদক তাদেরকে গ্রেফতার করেনি। পরে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
সম্প্রতি বেসরকারি খাতের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৩৫০০ কোটি টাকা নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমপি প্রশান্ত কুমার হালদার। তার মূল পেশা ছিল আর্থিক খাতের বড় বড় কোম্পানি দখল ও অর্থ আত্মসাত করা। তিনি নানা কৌশলে বড় বড় চারটি কোম্পানি দখলে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বি আইএফসি)।
সূত্র বলছে, তার এসব কোম্পানি দখল ও অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনেই সবকিছু ঘটেছে। আর ৩৫০০ কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালাতে তাকে সহযোগিতা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। এর বিনিময়ে তারা মোটা অংকের টাকা পেয়েছে।
প্রশান্ত কুমার হালদার দীর্ঘদিন ধরেই নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখলের কাজ করছে। হাতিয়ে নিয়েছিল হাজার হাজার কোটি টাকা।
সাম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের সময় এই দুর্নীতিবাজ হালদারের নাম সামনে আসে। এ সময় দুদক যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে কথিত অনুসন্ধান শুরু করে, তাঁদের মধ্যে পি কে হালদার একজন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৪ নভেম্বর হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিল দুদক। তার আগে ৩ অক্টোবর তাঁর বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ঠিকই দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। বেশির ভাগ অর্থও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
৩৫০০ কোটি টাকা নিয়ে প্রশান্ত কুমারের পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই এনিয়ে সারাদেশে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশান্ত কুমার বিগত ১৫ বছর ধরে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখলে নিচ্ছে। নামে-বেনামে ভুয়া কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই সময় দুদক কোথায় ছিল? তারপর তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ওই ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় কি করে? তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকার পরও দুদক তাকে গ্রেফতার করেনি কেন? দুদক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া তার পক্ষে দেশত্যাগ করা সম্ভব না। দুদকের সঙ্গে সমঝোতা করেই প্রশান্ত কুমার দেশ ছেড়েছে।