খালেদা জিয়ার নিজ জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহত নির্যাতনের অভিযোগ

0

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা অব্যাহত নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোথাও নীরব, কোথাও সরকারি দলের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরো জেলাকে বিএনপি নেতাকর্মীশূন্য করতে নানামুখি হামলা-মামলা অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার।

রোববার সকালে শহরের ইসলামপুর রোডের জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল। এ সময় জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক এম এ খালেক, এয়াকুব নবী ও আলাউদ্দিন গঠন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেখ ফরিদ বাহার বলেন, সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের ভয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে ঈদ করতে পারেনি। সরকার দলের সন্ত্রাসীরা বিএনপির বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে হামলা চালিয়ে ইফতার সামগ্রী লুটপাট এবং প্যান্ডেল ভাঙচুর করে হামলা চালিয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা একসাথে বসে চা খাচ্ছে।

তিনি বলেন, ৪ মে ঈদের পরদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপির ফলেশ্বর বাড়ি সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা বাড়ির চতুর্দিকে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হোন্ডা মহড়া দেয়। বিএনপির কোনো নেতাকর্মী যেন ভিপি জয়নালের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারে সেজন্যই এই মহড়া দেয়া হয়।

এছাড়া ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর নবী মেম্বার ও এই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আইয়ুব আলী মিলন ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে মসজিদের সামনে তাদের লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেছে ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। এ সময় নুর নবী দৌড়ে ভিপি জয়নালের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মিলনকে একা পেয়ে মারাত্মক জখম করে তার পকেটে থাকা মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মুমুর্ষূ অবস্থায় মাস্টারপাড়ায় নিয়ে যায় তারা। মিলনের মোটরসাইকেল ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলে। খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে জুলহাস, মিনার ও মজনুকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে তাদের মোবাইল ও পকেটে থাকা টাকা নিয়ে যায়।

বাহার আরো অভিযোগ করেন, ১৮ এপ্রিল ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে যুবদল নেতা মাঈন উদ্দিন মায়াকে যুবলীগ সন্ত্রাসীরা তার বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। তার নামে কোনো মামলাও নেই।

তিনি বলেন, ২৫ এপ্রিল আইনজীবী ভবনের নিচ থেকে ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল হালিম মানিককে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে কলেজ কম্পাউন্ডে আটক করে রাখে। পরে ফেনী মডেল থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

২৭ রমজান ধলিয়া ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন স্থানীয় মমতাজ মিয়ার হাটে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। সেখানে ধলিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সন্ত্রাসীরা ইফতার মাহফিলে হামলা চালিয়ে ইফতারসামগ্রী লুটপাট করে প্যান্ডেল ভাঙচুর করে। ২৮ রমজান লেমুয়া ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করলে সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা হাজির হয়ে ইফতার মাহফিল করতে নিষেধ করে। একইদিন মোটবী ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করলে সেখানে বাধা দেয়া হলে ইফতারের বরাদ্দকৃত অর্থ স্থানীয় হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ২৭ এপ্রিল সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিলে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা হামলা করে ইফতারসামগ্রী লুট করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ঈদের পরদিন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির গুম হওয়া ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে যান জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। সেদিন শর্শদীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে একত্রিত হলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ১০-১৫ জন নেতাকর্মীকে আহত করে। সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন পাটোয়ারী ও পৌর যুবদলের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন সোহাগকে বেধড়ক মারধর করে। ঈদের পরদিন পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার এলাকার বাসা থেকে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন বাবলুকে রাত ১১টার দিকে বিনাকারণে র‌্যাব তুলে নিয়ে যায়।

এছাড়া ফেনী পোস্টঅফিস সংলগ্ন ফেনী সেন্টারে সন্ত্রাসীরা অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। মার্কেটে থাকা সিসি ক্যামেরা সন্ত্রাসীরা ভেঙ্গে নিয়ে যায় এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েলের অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেয়। ৩০ রমজান ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী মুজাহিদ ও হৃদয়ের উপর স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে আহত করে পুলিশে সোপর্দ করে।

শেখ ফরিদ বাহার বলেন, এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায় উপরের নির্দেশে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। উপরের নির্দেশ মানে– এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা জানায়, নিজাম উদ্দিন হাজারী নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির কাউকে কোথাও একত্রিত হতে দেয়া হবে না। বিএনপি যদি সংগঠিত হয় তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সহজে পার পাবে না বলেও তারা জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এ কে শহীদ উল্যাহ খোন্দকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এগুলো বিএনপি নেতাদের মনগড়া বক্তব্য। এ ধরনের কোনো ঘটনা পত্রপত্রিকা এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা যায়নি। আন্দোলন-সংগ্রামে সফল না হয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিএনপি নেতারা কাল্পনিক অভিযোগ করছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com