সাতক্ষীরায় পেট্রল ঢেলে মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় নববিবাহিত এক মাদ্রাসাছাত্রীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। ওই ছাত্রী এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার স্বামীও।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে উপজেলার কাশিপুর গ্রামে কপোতাক্ষ নদের তীরে এ ঘটনা ঘটে। নববিবাহিত ওই মাদ্রাসাছাত্রীর নাম তামান্না খাতুন (১৮) ও তার স্বামী নাম ফারহাদ হোসেন (২৫)। দুই মাস আগে তাদের বিয়ে হয়।
তামান্নার ভাই কলেজছাত্র নাইমুর রহমানের বরাতে জানা যায়, তার বোনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাতক্ষীরা শহরের পুরাতন সাতক্ষীরার ঘোষপাড়ার ফারহাদ হোসেনের বিয়ে হয়। ঈদের পরদিন বুধবার স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন তামান্না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশে কপোতাক্ষ নদের ধারে বেড়াতে যান। রাত আটটার দিকে একজন হঠাৎ এসে তামান্নাকে জাপটে ধরে মুখ চেপে ধরে। এরপর কয়েকজন তার শরীরে পেট্রল ঠেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
‘এ সময় স্বামী ফরহাদ এসে তামান্নাকে নিয়ে কপোতাক্ষ নদে ঝাঁপ দেন। চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ এসে তাদের উদ্ধার করে খুলনা হাসপাতালে নিয়ে যান। তামান্নার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।’
নাইমুর রহমান আরও বলেন, কলারোয়া পৌরসভার সাদ্দাম হোসেন নামের মালয়েশিয়াপ্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে তার বোনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু গত আড়াই বছরেও দেশে না ফেরায় ভালো পাত্র পাওয়ায় তামান্নাকে দুই মাস আগে বিয়ে দেন মা–বাবা। এর মধ্যে সাদ্দাম দেশে ফিরেছেন। এ ছাড়া, আবদুর রউফ নামের এক প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে তামান্নাদের। দুই পক্ষ মিলে তার বোন ও ভগ্নিপতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলেও জানান তিনি।
ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তামান্নার সঙ্গে রয়েছেন তার মা তাসিনা বেগম। মুঠোফোনে তিনি বলেন, তার মেয়ের অবস্থা ভালো নয়। শরীরের প্রায় ৪২ শতাংশ পুড়ে গেছে। বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, তামান্নার স্বামীর ডান হাত পুড়ে গেছে। তিনি এখন খুলনায় চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করেছেন তামান্নার বাবা আবদুল হক। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন মালয়েশিয়াপ্রবাসী সাদ্দাম হোসেন এবং প্রতিবেশী রউফের ছেলে ফিরোজ, মেয়ের জামাই আবদুল হামিদ, স্বজন সালাউদ্দিন, রাজু আহমেদ ও তুহিন। ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক। তাদের মুঠোফোনও বন্ধ। ফলে তাদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রউফের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পাশের বাড়ির সকিনা বেগম নামের একজন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনার পর রউফের বাড়ির লোকজন সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, আবদুল হক বাদী হয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলার আবেদন করেছেন। তারা অভিযানে নেমেছেন। আশা করছেন দ্রুত ভালো খবর দেওয়া যাবে।