দুর্ভাগ্যজনক আমাদের দেশেতো আদালত স্বাধীন না
সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত সরকার বিবেচনা করবে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি ও সচেতন মহলে নতুনভাবে আলোচনা শুরু হয়।
যেহেতু সমপ্রতি খালেদা জিয়ার স্বজনরা দেখা করে এসে দাবি করেন, খালেদা জিয়ার হাত ও আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে, ডায়াবেটিস ১৮, হাঁটু ফুলে গেছে, তিনি এখন স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে পারছেন না, এমন পরিস্থিতিতে তিনি বাঁচবেন কি না— এমন প্রশ্নও তোলেন। ৫ বছরের সাজার মধ্যে খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে প্রায় দুবছর সাজা ভোগ করেন।
এছাড়া তিনি বয়স্ক নারী, গুরুতর অসুস্থ, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর এসব দিকগুলো বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে রাষ্ট্র ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষ মহল।
তবে হঠাৎ করেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার মুখে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি শুনে আশ্চর্যান্বিত। তারা মনে করছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল হলো সাংবিধানিক পদ। সরকার যাবে আসবে কিন্তু এই পদটি থাকবে। তার মুখে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি রহস্যজনক মনে করা হচ্ছে। তারা হুট করেই অ্যাটর্নি জেনারেলের কথায় আবেদন করবে না।
তবে তারা বলছেন, যেহেতু আদালত বলেছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে সেহেতু সরকারের একক ক্ষমতা রয়েছে সাজা স্থগিত করার।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের আবেদন করা হলে সরকার বিবেচনা করবে। গতকাল মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সাধারণত সাজা স্থগিত করা হয় অনেকদিন সাজা খাটার পর। তবে তারা যদি সাজা স্থগিতের আবেদন জানান তাহলে সরকার সে ব্যাপারে বিবেচনা করবে।
এ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের জন্য আবেদনের দরকার নেই। এটা সরকারের একক ক্ষমতা। বিএনপি আবেদন করলে সরকার ভেবে দেখবে এরকম কোনো বিধান নেই। খালেদা জিয়া যেহেতু গুরুতর অসুস্থ। এটা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি।
আদালত তার উন্নত চিকিৎসার কথা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। যেহেতু খালেদা জিয়া সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, এখানে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নাই। এ পরিস্থিতিতে সরকার তার জামিন স্থগিত করে দিয়েও মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। আমি আবারও বলছি, সাজা স্থগিতের বিষয়টা সরকারের একান্ত নিজস্ব দায়িত্ব, যেহেতু খালেদা জিয়া মারাত্মক অসুস্থ, সেহেতু এটা সরকারের মানবিক দায়িত্ব এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব তার চিকিৎসা করা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, আমার মনে হয় তারা এ ব্যাপারে অতীতে অনেকবার নানাভাবে আবেদন করেছে। আদালতের জামিন দেয়ার ব্যাপারে এখতিয়ার রয়েছে। আদালত ইচ্ছা করলে জামিন দিতে পারতো কিন্তু আদালত দেয় নাই। দুর্ভাগ্যজনক আমাদের দেশেতো আদালত স্বাধীন না, এটাতো আদালতের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সরকারের সবুজসংকেত না থাকলে আদালত মুক্তি দেবে কেন— আমি নিশ্চিত না।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দেখেন অ্যাটর্নি জেনারেলতো রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, সরকারের না। তিনি সরকারের কথা কীভাবে বলেন, এটাই তো আমাদের আশ্চর্যের বিষয়।
আমরা এর আগেও বলেছি, অ্যাটর্নি জেনারেল হচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আর সরকার হচ্ছে একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা। সংবিধানটা সারাজীবনের। সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল কি বললো সেটা শুনে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেবো না। আমরা আমাদের দলীয় আইনজীবীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্তে যাবো।