মুজিব বর্ষ পালন করতেই শেয়ার বাজার লুট!
একদিকে চলছে মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা অন্য দিকে তার আড়ালে শেয়ার বাজার থেকে লুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নতুন বছরের শুরু থেকেই প্রতিদিনই ব্যাপক হারে দরপতন হচ্ছে। কিন্তু, সরকারের পক্ষ থেকে এনিয়ে কিছুই বলা হচ্ছে না। তবে, বিনিয়োগকারীরা বলছেন ক্ষমতাসীন সরকার ওপর মহলের নির্দেশেই এই সংকট তৈরী হয়েছে।
গত সোমবার শেয়ার বাজারের সূচকের পতন আগের ৫ বছরের রকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রতিবাদে ঢাকা স্টক এক্সেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ কার্যদিবসে ২০ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। আর এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে এক লাখ কোটি টাকা। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। আর আজ দিন শেষে তা নেমে এসেছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়।
শেয়ার বাজার থেকে এভাবে লাখ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেলেও এর দায় নিচ্ছেন না কেউ। বিষয়টিকে সবাই কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
অনেকেই আবার আঙ্গুল তুলছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রতি। তারা মনে করছেন, মুজিব বর্ষ পালন করতেই সরকার শেয়ার বাজার থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ কারণেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের টাকা হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ব্যাপক দরপতন নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য নেই বলে জানান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান।
আর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, শেয়ারের দর ওঠানামা করবে, এটাই স্বাভাবিক। শেয়ারদর ওঠানামা নিয়ে কথা বলা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়। পৃথিবীর কোনো দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ নিয়ে কথা বলে না। এ নিয়ে অন্য কোনো দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করা হয় না।
আবার দরপতন নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভয়ে বাজার-সংশ্নিষ্টদের সুপরিচিত ব্যক্তিরা সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেক সময় শেয়ার বাজারের স্বার্থের বিপরীতে কাজ করেছে। এমনসব আইন করেছে, স্বার্থান্বেষী মহলকে কারসাজি ও অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছে। এটাই আজকের এই দুর্দশার কারণ।
জানা গেছে, দরপতনে বিনিয়োগকারীদের দুর্দশা নিয়ে বাজার-সংশ্নিষ্টদের কেউ মুখ খুললেই তাদের ওপর খড়্গহস্ত হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত সপ্তাহে সমকালের এক প্রতিবেদনে শেয়ার বাজার নিয়ে এই মুহূর্তে করণীয় বিষয়ে একটি ব্রোকারেজ হাউসের সিইওর মতামত ছাপা হয়। এর পর বিএসইসি থেকে ফোন করে তাকে শোকজ করা হতে পারে বলে বলা হয়েছে। এভাবে হেনস্তা হওয়ার ভয়ে শেয়ার বাজার বিশ্নেষক হিসেবে পরিচিত মুখের কেউই এখন গণমাধ্যমে কথা বলতে চাইছেন না।”
এছাড়া, শেয়ার বাজারের এই ব্যাপক দরপতনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, মুজিব বর্ষ পালনের জন্য সরকার এখন টাকার জন্য ছুটছে। এক বছর মেয়াদী যেসব কর্মসূচি সরকার হাতে নিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ সরকারের হাতে নেই। তাই, নতুন বছরের প্রথম ১০ দিনেই শেয়ারবাজার থেকে সরকার ২০ কোটি ৪৭৫ লাখ টাকা সরকার সরিয়ে নিয়েছে। আর এ কাজে পর্দার আড়াল থেকে ভূমিকা রেখেছেন শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমান ও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
জানা গেছে, খুব সহজেই শেয়ার বাজারের অস্থিরতা কমছে না। সরকার এখান থেকে আরও এক লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে বলে দাবি করছেন সূত্রটি।
অন্যদিকে শেয়ার বাজারে দরপতনে লোকসানের খবরে রাজধানীর বনানীতে বিটিআই টাওয়ারের ১১তলা থেকে লাফ দিয়ে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের আইটি বিভাগের প্রধান হুমায়ুন কবির (৫২) আত্মহত্যা করেছেন। তবে কোম্পানিটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, হুমায়ুন কবির কীভাবে ১১তলা থেকে নিচে পড়েছেন তা তারা জানেন না। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে তার মৃত্যুর বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে।
এ বিষয়ে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) একেএম শরিফুল ইসলাম বলেন, হুমায়ুন কবির প্রতিষ্ঠানটির আইটি বিভাগের প্রধান ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি রুমে একা ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে অপর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। সংবাদ পেয়ে বনানী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে।