নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করুন
ধর্ষণ একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। ধর্ষণ সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজ হলেও প্রতিদিনের পত্রিকায় ধর্ষণের সংবাদ দিনের শুরু হয়।
ফেনীর সোনাগাজিতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নির্মমভাবে হত্যার পর সারা দেশে ন্যায়বিচারের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন হয়। নুসরাতের হত্যাকারীদের বিচারে ফাঁসির রায় হয়েছে; কিন্তু এরপরও দেশে নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
আন্দোলন, বিক্ষোভ কিংবা নানা কর্মসূচি পালন করেও ট্রাইবুনালের দীর্ঘসূত্রতা, প্রশাসনিক কাঠামোগত দুর্বলতা, আপিলের সুযোগ ইত্যাদি কারণে অপরাধীর শাস্তি বিলম্বিত হওয়ার কারণে ধর্ষণের নতুন নতুন খবর আসছে।
রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দেশ নারীদের জন্য কতটা অনিরাপদ হলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাস থেকে নামার পর ধর্ষণের শিকার হতে পারে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ধর্ষকের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না; সেখানে একজন সাধারণ নারী নিজেকে কতটা নিরাপদ ভাবতে পারবে?
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অনাবাসিক শিক্ষার্থী। আমাকেও প্রতিদিন বাসে করে বাসায় ফিরতে হয়। নানা শঙ্কা আর ভয়-ভীতির মধ্য দিয়েই প্রতিটা দিন অতিবাহিত হয়।
একাডেমিক বা অন্য কোনো কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরতে না পারলে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাকেও। কয়েকবার নিপীড়নকারীদের কবলে পড়ে উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু চলার পথে যানবাহনে হাজারো নারী প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হচ্ছে; সমাজ বাস্তবতার ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।
বিগত ১০০ দিনে দেশে ৩৯২ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। রাষ্ট্র এদের মধ্যে ক’জন ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছে? টাকার জন্য রিপোর্ট প্রদানে গড়িমসি, মোটা অঙ্কের টাকার লোভে আদালতে দাঁড়িয়ে ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে আইনি লড়াই ছাড়াও বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতায় ধর্ষিতার দীর্ঘশ্বাস চাপা পড়ে যাচ্ছে। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল গঠন করে ধর্ষকের শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
ধর্ষককে বুক উঁচিয়ে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে দেখে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার মেয়েটির কষ্ট আরও বাড়ে। অন্যদিকে শাস্তি পায় না বলেই আরও বড় অপরাধ করার স্পর্ধা পেয়ে যায় অপরাধীরা। এ বাস্তবতা অবলোকন করে অন্য অপরাধীরাও অপরাধ করতে উৎসাহিত হয় এবং আরও ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে নিজেকে জড়ায়।
এভাবে সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র কলুষিত হচ্ছে। এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের সেঞ্চুরি হয়; তারপরও ধর্ষক বুক ফুলিয়ে রাস্তাঘাটে নির্বিঘ্নে হেঁটে বেড়ায়!
আজ আমরা এতটাই উন্নয়নের শিখরে উঠেছি, হাজারো ধর্ষিতার চিৎকার ও কান্না আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। ১৯৯১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সরকার প্রধান হিসেবে দেশে নারীরাই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল।
কিন্তু এতো কিছুর পরও আজ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরে এসেও ধর্ষণের বিচার চেয়ে আমাদের রাস্তায় নামতে হয়। আমার প্রিয় জন্মভূমি ধর্ষকমুক্ত হোক; ধর্ষকদের দ্রুততম সময়ে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফাতেমাতুজ জোহরা এলি