হানিফের বড় ভাইয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফুফুতো বোনের বিয়ে
হানিফের বড় ভাইয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফুফুতো বোনের বিয়ে হয়। ওই হিসেবে শেখ হাসিনার বেয়াই হন হানিফ।
মৎস্য ব্যবসায়ী হানিফ। কিন্তু মাছের আড়ৎ নাই , মাছের ঘের নাই। বায়বীয় গায়েবি মাছের ব্যবসায়ী , সেই ব্যবসা থেকে হাজার কোটি টাকা মাত্র কয়েক মাসে অবৈধ আয়।
দলীয় ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পর মাহবুব উল আলম হানিফ তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে অনেকগুলো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিপুল সম্পত্তির মালিক হন। এর মধ্যে নিজের নামে নিবন্ধিত ও ব্যাংকে গচ্ছিত সম্পত্তির হিসাব হলফনামায় উল্লেখ করলেও এর বাইরে বেনামে ও আত্মীয়স্বজনের নামে বিপুল সম্পত্তি কিনেছেন।
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০১৭,
বিপুল এই সম্পদের হিসাব হানিফের নিজেরই দেওয়া। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামায় হানিফ এ তথ্য দিয়েছেন। তবে এই হিসাবের বাইরে বেনামে আরও সম্পদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
হলফনামায় হানিফ লিখেছেন, নতুন তিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর কোনো আয় হয় না। প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে তিনি মৎস্য খাতের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, বছরে সেখান থেকে আয় তিন কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে মৎস্য খামারটি কোথায়, তার উল্লেখ করেননি।
কুষ্টিয়া জেলা ৭০ একর জমি , সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটে ১৮০ , বাগেরহাটের মংলা উপজেলার জয়মনিতে ৫৯৩ একর , কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ২০০ একর নামমাত্র মূল্য দেখিয়েছেন হানিফ। কয়েকশত কোটি টাকার ভূমি নির্নাচন কমিশনে সামান্য মূল্যের দেখিয়েছেন হানিফ।
শুরু: প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যবসায়ী হিসেবে মাহবুব উল আলম হানিফের যাত্রা শুরু ১৯৮৬ সালে। সে সময় তিনি কুষ্টিয়া থেকে খুলনায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। খুলনার দাকোপ উপজেলায় একটি চিংড়িঘের স্থাপন করেন তিনি। ’৯০ সালের পর খুলনা ছেড়ে আবার কুষ্টিয়ায় ফিরে যান তিনি।
জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি জানান, খুলনার দাকোপ ও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালিতে তাঁর মাছের ঘের রয়েছে। সেখান থেকেই ওই আয় হয়। কিন্তু ওই দুই জায়গায় প্রথম আলো অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারে, নব্বইয়ের দশকের দিকে তিনি সেখানে দুটি মাছের ঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দুটিই বর্তমানে বন্ধ।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা কাগজে হানিফ নিজেই বলেছেন ,
সম্পদ ও আয়: গাজীপুরে এক কোটি ৯৮ লাখ টাকায় তিন একর জমি, বাগেরহাটের মংলা উপজেলার জয়মনিতে দুই কোটি ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৭৬ টাকা দিয়ে ৬৬ দশমিক ৫৯৩ একর জমি, জয়মনিতেই দশমিক ৭০ একর জমি দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকায়, কুষ্টিয়ার জোড়হাঁসে ১১ লাখ টাকায় জমি কিনে সেখানে ২০ লাখ টাকায় একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন তিনি। এ ছাড়া সানমেরিন শিপইয়ার্ডে শেয়ার কেনা বাবদ অগ্রিম দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন এবং সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে তিনি দিয়েছেন এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা।
হানিফ তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে হলফনামায় লিখেছেন, এক কোটি পাঁচ লাখ ও ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের দুটি গাড়ি রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া নগদ ও ব্যাংকে মিলিয়ে তাঁর মোট ব্যবসাবহির্ভূত অর্থের পরিমাণ ৪৪ লাখ ৬০ হাজার ৬২৮ টাকা।
৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন সরকারের মদদে গত ৫ বছরে প্রায় একশত কোটি টাকার অবৈধ মালিক হানিফ।
মঈন উদ্দিন , ফরখরুদ্দিন আঁতাতের পর আওয়ামীলীগের ক্ষমতায়নের পর হানিফ হয়ে উঠেন অবৈধ আয়ের দানবে। বিদেশে পাচার করেন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। যার বেশিরভাগ অংশ আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদের মদদে পাচার হয়।
প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ করে নিজের বাড়ি বানিয়েছেন হানিফ। সামান্য ফুটফরমায়েশী কামলা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হানিফ।
মৎস্য খামার নেই হানিফের ,
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা কাগজে হানিফ নিজেই বলেছেন ,
এবারের নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবারের হলফনামায় মাহবুব উল আলম হানিফ মোট বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ২৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা, যা আগের বারের চেয়ে বেশ কম। গতবার হানিফ আয় দেখিয়েছিলেন ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৩ কোটি ৭০ লাখই আসত মাছ চাষ থেকে।
এবার হানিফ ব্যবসা থেকে বছরে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। গতবার তিনি ব্যবসার ঘরে বন্ধনীতে মৎস্য উল্লেখ করেছিলেন। এবার তিনি শুধু ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মৎস্য খাত তাঁর আয়ের বড় উৎস। হলফনামায় সেটা থাকার কথা। পরে তিনি জানান, ব্যবসার আয়ই মাছ চাষের আয়।
মাহবুব উল আলম হানিফের নিজ নামে অথবা পরিবারের নামে কোনো কৃষিজমি নেই। চা, রাবার বাগান বা মৎস্য খামারের ঘর ফাঁকা রাখেন তিনি।