জনগণ আমাদের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি স্তর ‘দুর্নীতিতে ভরে গেছে’ উল্লেখ করে উত্তরের মেয়র পদে ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, নির্বাচিত হলে প্রথমেই দুর্নীতি দমনে কাজ করতে চান তিনি। আজ মঙ্গলবার নির্বাচনী গণসংযোগকালে তিনি এ কথা বলেন।
উত্তর সিটির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই। একের পর হামলার ঘটনা প্রমাণ করছে জনমত আমাদের পক্ষে। জনগণ আমাদের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে।
আজ বেলা ১১ টায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বাড্ডা ফুজি টাওয়ার থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ। এসময় হাজার হাজার নেতা-কর্মী ‘ধানের শীষ’, ‘ধানের শীষ’ স্লোগান দিতে থাকেন। তারা মেয়রের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করেন। বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে ধানের শীষে ভোট চাওয়া হয়।
বাড্ডা ফুজি টাওয়ার এলাকায় গণসংযোগকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে আমাদের প্রচারে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৪৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলা হয়েছে, ভাংচুর হয়েছে। বিশেষ করে ১৮ নং ওয়ার্ড যেখানে আমি একটা নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধন করে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম, পেছন থেকে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। সে হামলাতে তিনজন আহত হয়েছে। এরকম নিয়মিত পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে।
তাবিথ আউয়াল নির্বাচন কমিশন ও কর্তৃপক্ষকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আইন মেনে ভোটারদের অধিকার ফিরিয়ে দিন।
তাবিথ আউয়াল বলেন, ভোটাররা উৎসবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক ওপর হামলার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেন তারা আতঙ্কে থাকে। আমি বারবার বলছি, আমাদের মনোবল শক্ত আছে। আমরা যেটা আশঙ্কা করেছিলাম, সেটি নিয়মিত প্রমাণিত হচ্ছে।
হামলা বাড়লে কিভাবে মোকাবেল করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, জনমত আমাদের পক্ষে। জনগণ আমাদের সাথে অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে এবং এসব দেখেই কিন্তু হামলা করা হচ্ছে। উনারা হতাশাগ্রস্ত, দিশেহারা। ওনারা বুঝতে পারছেন না, কী করবেন।
তিনি বলেন, জনগণ আমাদের সমর্থন দিয়ে অতি শিগগিরই ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় দেবে। স্বাভাবিকভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন নাকি পুলিশি হয়রানি রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, নেতাকর্মীরা দিনের বেলায় স্বাভাবিকভাবে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন। প্রচারণা শেষ হলে রাতে নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ খোঁজ খবর নিচ্ছে, কখনো ইউনিফরম পরে, কখনো সাদা পোষাকে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নাই। শত বাধার পরও বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্ত আছে। তারা যতই উস্কানি দিক আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে আছি, থাকবো।
এরপর উত্তর বাড্ডা লিংক রোড থেকে মধ্য বাড্ডা বাজার, স্কুল রোড, মেরুল বাড্ডা, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের পোস্ট অফিস থেকে শুরু হয়ে পাঁচতলা এলকায় গণসংযোগ করেন তাবিথ আউয়াল। সেখান থেকে দক্ষিণ আনন্দনগর, আফতাব নগর মেইনরোড থেকে মধ্যবাড্ডায় প্রচার চালানো হয়। প্রতিটি জায়গায় দেখা গেছে জনতার ঢল। তাবিথ আউয়াল বলেন, ধানের শীষের পক্ষে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ ভোট দিতে পারলে বিজয় সুনিশ্চিত।
গণসংযোগে তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জলবায়ু বিষয়ক সহ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ,সহসভাপতি জেবা খান, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, সহসভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জু, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বারিধারা মা ও শিশু হাসপাতাল, বারিধারা নতুন বাজার, ভাটারার মোড়, ছোলমাইদ, ছাপরা মসজিদ, কোকাকোলার মোড় ও বারিধারা জে ব্লকে গণসংযোগ করেন তাবিথ। প্রচারে গিয়ে জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। অনেকে তাকে দেখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন। দোকানিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় তাদের সমস্যার কথা শুনেন।
গণসংযোগকালে বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গিয়ে গিয়ে তাবিথ আউয়াল লিফলেট বিতরণ করেন। রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এ সময় সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার সালাম নিন, তারেক রহমানের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’। ‘দুর্নীতি দুঃশাসন প্রতিরোধে, আপোস করবে না ঢাকাবাসী’। ‘নগরবাসীর একটি ভোটে, খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে’-ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
গণসংযোগে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, এই আসা আমাদের শেষ আসা নয়। আমরা বারে বারে আসবো। মনোবল ভাঙবেন না, সবাইকে উৎসাহিত করবেন। বিজয় আমাদের হবে।
বাড্ডা আদর্শনগর প্রবেশদ্বারে তাবিথ বলেন, নির্বাচন আচরণ বিধি মেনে এবং জনগণের যাতে অসুবিধা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই প্রচার চালাচ্ছি। জনগণের দিকে থেকে আমরা ব্যাপকভাবে সাড়া পাচ্ছি। জনগণ আমাদের পক্ষে থাকায়-এতে সরকার ভয় পেয়ে গিয়ে আমাদের ওপর হামলা করছে।
‘বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মিথ্যাচার করছে’, আওয়ামী লীগ মনোনীত উত্তরের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলামের এমন বক্তব্যের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘তার বক্তব্যের জবাব দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, আমার ভাষাটাও জানা নেই। আমাদের সবারই অভিযোগ দেয়ার জায়গা নির্বাচন কমিশনে। আশা করি অভিযোগগুলো নির্বাচন কমিশনই খতিয়ে দেখবেন কতটুকু সত্য, কতটা সত্যতা নাই। পাল্টাপাল্টি কথা না বলে আমাদের সবারই উচিত ভোটাদের সাথে কথা বলা, তাদের মাঝে যাওয়া। তারা যে রায় দেবে, সে রায়টা যেন আমরা সকলে মানি।’
ভোটাররা কী বলছেন জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তাবিথ বলেন, ‘ভোটাদের প্রতিক্রিয়া অনেক। আমাদের সাথে ঐক্য ঘোষণা করেছে। প্রকাশ্যে আমাদের বলছে, এগিয়ে যেতে, তারা আমাদের সাথে থাকবেন এবং ভোট দিতে চান। ভোট দিয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করবেন।’
মেরুল বাড্ডার নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে। জলাবদ্ধতা, বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন সবচেয়ে বেশি সমস্যা এই এলাকার। রাতের বেলা লাইটিং ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, এলাকার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভয়ভীতিতে বাস করে। দুর্নীতি দমনসহ ১২ সমস্যা দমনে প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ।
রাস্তার খানাখন্দকের বেহাল চিত্র দেখিয়ে এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে রাস্তা খুঁড়োখুঁড়ি চলছে। হাঁটার মতো অবস্থা নেই। জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দীর্ঘদিন এভাবে কোনো সংস্কার কাজ চলতে পারে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মাহমুদ হাসান কর্তৃক পাঠানো এক বার্তায় এসব কথা জানানো হয়।