আ.লীগ নেতা ও তার শিক্ষিকা স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ হাজার কোটি!

0

কুষ্টিয়ায় একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকার শতকোটি টাকার সম্পদের উৎসের সন্ধানে নেমে আরও হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এতে দুদকের তদন্তের জালে আটকে গেলেন ওই স্কুল শিক্ষিকার স্বামী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা।

তাকে বলা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সেকেন্ড ইন কমান্ড।

ফলে দুদকের সদর দপ্তর হতে পাঠানো নির্দেশনায় এখন আর কেবলমাত্র ০৪ নং পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাম্মী আরা পারভীনের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদই নয়, সেই সঙ্গে সমন্বিত তদন্ত প্রক্রিয়ায় ওই শিক্ষিকার স্বামীর অবৈধ সম্পদের হদিস উদ্ঘাটনেও নেমেছে দুদক।

সে লক্ষ্যে সমন্বিত দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাকারিয়া স্বাক্ষরিত একটি ইনকোয়ারি পত্র সরকারের সবগুলো দপ্তরে পাঠানো হয়। চিঠিতে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দিতে অনুরোধ করেন দুদকের ওই কর্মকর্তা।

দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সবগুলো তথ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি ওইসব দপ্তরগুলো পাঠিয়েছে। এখন সেগুলো যাচাই বাছাই শেষে সঠিক তথ্যের মানদণ্ড বা মেরিট ধরে মামলা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মধ্যবর্তী সময়ে ঢাকাস্থ দুদক সদর দপ্তরে প্রাপ্ত একটি অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক জানতে পারে, কুষ্টিয়া শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাম্মী আরা পারভীনের বিভিন্ন ব্যাংকে চলমান নানা ধরনের সঞ্চয়ী স্কিম হিসাবে প্রায় অর্ধশত কোটি নগদ রয়েছে। এছাড়াও তার উচ্চমূল্যের জমি, ভবন, মার্কেট রয়েছে। তার স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তির আনুমানিক মূল্যমান শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একজন স্কুলশিক্ষিকার ব্যাংক হিসাবে একসঙ্গে জমাকৃত এতো টাকার উৎসের সন্ধান শুরু করে দুদক। এসময় শাম্মী আরা পারভিনের অধিকাংশ ব্যাংক হিসাবের ট্রানজেকশনের সূত্র সন্ধানে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার নাম উঠে আসে। এ কারণেই এটি হয়ে ওঠে দুদক তদন্তের টার্নিং পয়েন্ট। যে কারণে গত বছরের মধ্যবর্তী সময়ে শুধুমাত্র শাম্মী আরা পারভিনের মামলাটি ছাড়াও মুখ্য হয়ে ওঠে তার স্বামী আতাউর রহমান আতার সম্পদের অনুসন্ধানটি। তাই ট্যাগিং সিস্টেমে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মামলাই একসঙ্গে প্রক্রিয়াধীন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুর রহমান জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিলে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান আতা তার প্রার্থিতা পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত অঙ্গীকারনামায় স্ত্রী ও নিজ নামীয়/সত্ত্বাধীন স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণে যথাক্রমে ১৫ লাখ ও চার লাখ ৮৮ হাজার টাকার ব্যাংক হিসাব এবং সম্পদের উল্লেখসহ সরকারি কোনো লাভজনক উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নন বলে অঙ্গীকার করেন।

দুদকের নোটিশ সূত্রে আরও জানা যায়, চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীনকে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে দুদকের নির্দিষ্ট ছকে সব সম্পত্তির হিসাব দাখিল করতে বলা হয়েছে। 

সমন্বিত দুদক কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জাকারিয়া জানান, আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালুমহাল ব্যবসা, হাট-বাজার ইজারা, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা খাত থেকে অর্জিত অবৈধ সম্পদের হিসাবে এক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে স্বামীর রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ পন্থায় অর্জন করা শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাম্মী আরা পারভীনের।

কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মুন্সি মো. মনিরুজ্জামান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রহমান মণ্ডল, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌলী মো. ইসতিয়াক ইকবাল হিমেলসহ দুদকের চিঠিপ্রাপ্ত দপ্তর গুলো সূত্রে জানা যায়, দুদকের পাঠানো চিঠিতে কেবলমাত্র মেসার্স আতাউর রহমান নামক ফার্মের সত্ত্বাধিকারী আতাউর রহমানের সব তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ আতাউর রহমান আতার নিজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্তত আরও অর্ধ ডজন অন্যান্য নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলোতে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যাদেশ পেয়েছেন।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে এক ভুয়া মামলাবাজের খপ্পরে আটকে কেবলমাত্র জেলার ২১টি বালু মহাল থেকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আয় করেছেন প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভেড়ামারা উপজেলার ষোল দাগ গ্রামের বাড়ি থেকে ২০১২ সালে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরের একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন তিনি। এরপর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ আপত্তিকর এক ভিডিওর জেলে দল থেকে বহিষ্কার হলে আতাউর রহমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে ভারমুক্ত হন তিনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

অভিযোগ আছে, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করে শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন তিনি। এছাড়া কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে পুকুর চুরি আর্থিক দুর্নীতি জেলার সর্বজন জ্ঞাত।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com