ক্ষমার দশকে রোজাদারের তাওবা
ক্ষমার দশক রোজাদারের জন্য মহান আল্লাহর এক বড় অনুগ্রহ। এ দশকে রোজাদার বার বার তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে। দিনের বেলায় রোজা রাখে, সন্ধ্যায় ইফতার করে, নিজেদের গুনাহ মাফে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। রাতে তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়েও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। অনেক রোজাদারের এ ক্ষমা প্রার্থনা চলে সেহরি পর্যন্ত। ক্ষমার এই দশকে রয়েছে রোজাদারের জন্য বিশেষ কিছু করণীয়। যা রোজাদারকে গুনাহমুক্ত করবে। তাহলো-
১. তাওবা-ইসতেগফারই রোজাদারের জন্য আল্লাহর রহমত। আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করার মাধ্যম তাওবা-ইসতেগফার। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা তা ঘোষণা করেছেন-
قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ
‘(হে নবি আপনি) বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম (গুনাহ) করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৫৩)
اَفَلَا یَتُوۡبُوۡنَ اِلَی اللّٰهِ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَهٗ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
‘তারা আল্লাহর কাছে তওবা করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন ? আল্লাহ যে ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৭৪)
فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا
‘তোমরা তোমাদের প্রভূর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০)
২. গুনাহ না করলেও তাওবা করা
বান্দার সর্বোত্তম গুণ হলো আল্লাহর কাছে তাওবা-ইসতেগফার করা। কোনো রোজাদার দেখতে গুনাহ না করলেও আল্লাহর কাছে সব সময় ক্ষমা প্রার্থনা করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ক্ষমা প্রার্থনার দ্বারা আল্লাহর একান্ত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হিসেবে বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যায়। যার প্রমাণ মেলে সুরা ফাতহ-এর দ্বিতীয় আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণায়। হাদিসে এসেছে-
হজরত মুগীরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত অধিক নাাজ আদায় করতেন যে, তাঁর পদযুগল ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হলো, আল্লাহ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের সব ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (তাহলে আপনি এত নামাজ পড়েন কেন?) তিনি বললেন, আমি কি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হবো না?’ (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে এত বেশি নামাজ আদায় করতেন যে, তাঁর দুই পা ফুলে যেতো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবু আপনি কেন তা (এত ইবাদত) করছেন? তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহ্র কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হওয়া পছন্দ করবো না? তাঁর মেদ বেড়ে গেলে তিনি বসে নামাজ আদায় করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছে করতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে কেরাত পড়তেন, তারপর রুকু করতেন।’ (বুখারি)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ১০০ বার ইসতেগফার করতেন। (তাবারানি)
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে আমার বান্দারা, তোমরা দিনরাত গুনাহ করে থাক। আমি তোমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেব। তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।’ (মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সব রোজাদার ব্যক্তির প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। যারা রমজান মাস পেলো কিন্তু নিজেরে গুনাহ থেকে মুক্ত হতে পারলো না।’ (তিরমিজি)
হাদিসের এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, অথচ গুনাহমুক্ত হতে পারলো না, তবে তার জন্য অকল্যাণ।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
রহমতের দশক পেরিয়ে রোজাদার ক্ষমার দশক অতিবাহিত করছে। গুনাহ থেকে মুক্তির প্রার্থনায় নিয়োজিত রোজাদার।যেন বিগত জীবনের গুনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারে। জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পেতে পারে। তাই মাগফেরাত ও নাজাতের দশকে বিশেষ এ দোয়া, তাওবা-ইসতেগফার করা জরুরি। তাহলো-
গুনাহ থেকে ফিরে আসতে তাওবাহ-ইসতেগফার পড়া-
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِى لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْم
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।
اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِى وَ دُنْيَاىَ وَ اَهْلِىْ وَ مَالِىْ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনি ওয়া দুনিয়ায়া ওয়া আহলি ওয়া মালি।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّىْ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’
اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’
اَللَّهُمَّ اَنْتَ رَبِّىْ لَا اِلَهَ اِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِى وَ أَنَا عَبْدُكَ وَ أَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَ وَعْدِكَ مَااسْتَطَعْتُ – أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ – أَبُوْءُلَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ و أَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ – فَاِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি, ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাত্বাতু। আউজুবিকা মিন শার্রি মা ছানা’তু। আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি। ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ কথা প্রমাণিত সত্য যে, ইসতেগফার আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়। যারা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।
আল্লাহর কাছেঝ ক্ষমা পাওয়ার সেরা সময় হলো এই রমজান মাস। দ্বিতীয় দশকের এ সময়টিতে নিজেদের গুনাহমুক্ত করার সেরা সময়। রমজানে রোজা অবস্থায় নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে না পারলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী সেসব রোজাদার হয়ে যাবে অভিশপ্ত। (নাউজুবিল্লাহ)
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত রমজানের দ্বিতীয় দশকে নিজেদের গুনাহ মাফে উল্লেখিত দোয়াগুলোর মাধ্যমে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজেদের আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ স্বীকারকারী বান্দা হিসেবে তৈরি করা। আল্লাহর কাছে নিজেদের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের দ্বিতীয় দশকে নিজেদের নিষ্পাপ করে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। গুনাহ মুক্ত হয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।