রমজানে আমাদের গুনাহ ক্ষমা করো; হে প্রভু!
ক্ষমার মাস রমজান। রোজাদার এ মাসে সওয়াবের নিয়তে ঈমানের সঙ্গে দিনের বেলায় রোজা রাখলে আল্লাহ তার বিগত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। এ মাসে সওয়াবের নিয়তে ঈমানের সঙ্গে রাতের বেলায় তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়লে আল্লাহ তার বিগত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। হে প্রভু! আপনি আমাদের রোজা ও তারাবি-তাহাজ্জুদের বিনিময়ে ক্ষমা করে দিন। ক্ষমার দশকে এ হোক রোজাদারের কাজ ও আকুতি।
রমজানে ক্ষমা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো রোজা রেখে, তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহর ভয়ই মানুষকে নিষ্পাপ ও গুনাহমুক্ত জীবন পেতে সহায়তা করবে। যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা সব কাজে তাঁকে ভয় করার জন্যই রোজার বিধান দিয়েছেন। তাকওয়া অর্জনই গুনাহ মাফের উপায়। আল্লাহ তাআলা তাকওয়া পালনের জন্য রোজা রাখার বিধান দিয়েছেন। কোরআনে এসেছে-
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের ওপর ফরজ ছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় থাকলেই মানুষকে ইসলামের বিধানগুলো মেনে চলবে। রোজা পালন করবে। বিনিময়ে বিগত জীবনের গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও রমজানের রোজা পালনে গুনাহ মাফের সুসংবাদ দিয়েছেন। পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় যদি রমজান মাসের ফরজ রোজা পালন করে তবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ايْمَانًا وَ اِحْتِسَابًا غُفِرَلَهُ مَا تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ
‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
অনেকেই গুনাহ মাফ বলতে ছোট ছোট গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়টি বুঝিয়েছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে হজরত ইবনু হাজার আল-আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ‘হাদিসের বাহ্যিক অর্থ ছোট-বড় সব গুনাহকেই অন্তর্ভূক্ত করে। তাঁর এ মতকে অনেকেই সমর্থন করেন।’
আবার অনেকে বলেছেন, কারো আমলনামায় যদি ছোট গুনাহ না থাকে আর যদি বড় গুনাহ থাকে তবে আল্লাহ ওই ব্যক্তির বড় গুনাহগুলো হালকা করে দেন।’ (ফতহুল বারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত একান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের দিনের বেলায় রোজা পালন করা। রাতের বেলায় তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়া। এসবের মাধ্যমে গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া। তবেই আল্লাহ তাআলা তার সব রোজাদার বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
রমজান মাসব্যাপী আল্লাহর ক্ষমা পেতে তাঁর কাছে ছোট ছোট আবেদন করা। যেভাবে আবেদনগুলো ওঠে এসেছে কোরআন-সুন্নায়-
১. رَبِّ اغْفِرْلِىْ وَتُبْ عَلَيَّ اِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُوْرُ
উচ্চারণ- ‘রাব্বিগফিরলি, ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুল গাফুর।’
অর্থ : পরওয়াদেগার! তুমি আমাকে মাফ কর এবং আমার তাওবা কবুল কর। কেননা তুমি হলে তাওবা কবুলকারী এবং ক্ষমাকারী। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)
২. رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
৩. اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّىْ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
৪. اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে হেদায়েত চাই, আপনার ভয় চাই, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি চাই, সচ্ছলতা কামনা করি।’
রমজান মাসে নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে পারলেই বছরের বাকি এগারো মাস গুনাহমুক্ত জীবন পাওয়ার আশা করতে পারে মুমিন। সে জন্য তাকওয়া অর্জন ও বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করার বিকল্প নেই।
দয়াময় হে প্রভু! রমজানের মাগফেরাতের দশকে সব রোজাদারকে বিগত জীবনের সব গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। রোজা পালন, তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়া এবং তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।