ভয় কেন, সাহস থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন: সরকারকে চ্যালেঞ্জ বিএনপির

সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এতই যদি উন্নয়ন করে থাকেন আর গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে এত ভয় কেন? এ সময় তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে দেখেন। এ দেশের মানুষ আপনাদের বিতাড়িত করে ছাড়বে।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকালে ইফতারের পূর্বে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী এলাকাতে উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগের রাতে ভোট হয়েছে, নিজেদের পছন্দমতো লোককে পার্লামেন্টে বসানো হয়েছে। বিচার, আইন-আদালত সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। আজকে আমাদের গুম হওয়া নেতাকর্মীদের সন্তানরা তাকিয়ে থাকে, কখন তাদের বাবা ফিরে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘এতই যদি উন্নয়ন করে থাকেন আর গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে এত ভয় কেন? তারা কথায় কথায় মায়ের বুক খালি করে দেয়, সন্তানের কাছ থেকে পিতাকে গুম করে দেয়।’

দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিবছর তারা তিন-চারবার করে দাম বাড়ায়। আর বিদ্যুতের দাম তো বাড়তেই আছে। একদিকে তারা দুর্নীতি করে আরেকদিকে দ্রব্যমূল্য বাড়ায়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এদেশে একটা ভোট হয়েছে। আপনারা সবাই জানেন কিভাবে ভোট হয়েছে। সেখানে তারা তাদের পছন্দের লোকদের বসিয়ে দিয়েছে। আজ আইন-আদালত ধ্বংস হয়ে গেছে। এ আদালতের মাধ্যমেই আজ বেগম জিয়াকে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তারেক রহমানের নামে কোনো প্রমাণ নেই, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পরে তার নাম যুক্ত করা হয়েছে। জোবায়েদা রহমানকেও তারা দেশে আসতে দিতে চান না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছয়শতের বেশি নেতাকে গুম করে দিয়েছে। আজ ইলিয়াস আলীর ছেলে-মেয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে কবে তাদের বাবা ফিরে আসবে। হাজার হাজার মানুষকে তারা হত্যা করেছে বিনা বিচারে। এভাবে এদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’

গণমাধ্যমের অবস্থা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাংবাদিকদের গলা চেপে ধরা হয়েছে। আপনারা লিখতে পারবেন না। যদি লিখেন জেলে নেয়া হবে, চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হবে। সংবাদকর্মীরা কিভাবে চলবে সেটা নিয়ে এখন তারা আইন তৈরি করছে। এটা তাদের পুরানো অভ্যাস। ’৭৫ সালে একইভাবে আওয়ামী লীগ তাদের এ হত্যা-গুম যখন কোনোভাবেই আড়াল করতে পারছিল না তখন তারা বাকশাল করেছিল।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে শুনলাম যারা এখানে আসছিল তাদের ওপর হামলা হয়েছে। এতই যদি উন্নয়ন করে থাকেন তাহলে ভয় পান কেন। একটা দল সম্মেলন করবে সেটাকে ভাঙেন কেন। শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করছি। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে দেখেন। এ দেশের মানুষ আপনাদের বিতাড়িত করে ছাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা কথায় কথায় গুলি করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই লড়তে হবে। আমাদের নেতা আজ আট হাজার মাইল দূরে, আমাদের নেত্রী গৃহবন্দী। আমাদের লড়াই করে এর থেকে বের হতে হবে। এদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক উপায়ে টোটাল ওয়ার করতে হবে। যারা তারেক রহমানকে বিশ্বাস করেন তাদের একটাই কাজ, ঐক্যবদ্ধ থাকা। আজকে শুধু তারেক রহমান কিংবা খালেদা জিয়ার লড়াই নয়। আমাদের দেশ স্বাধীন রাখতে পারব কিনা, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারব কিনা সেই লড়াই। আমাদের এ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সরকারকে পরিষ্কারভাবে বলেছি, পদত্যাগ করুন এবং নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। একটা নতুন জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। সে সরকার সকলকে নিয়ে কাজ করবে। আসুন আমরা সকলে একসাথে এগিয়ে যাই।’

সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটিু, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এ টি এম আব্দুল বারী, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনিরুল ইসলাম রবি, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাসুকুল ইসলাম রাজীব প্রমুখ।