আ.লীগের জন্য করোনা ছিল ‘আনন্দবার্তা’: রিজভী

0

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশের জন্য বিপদ হলেও আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছে মহোৎসব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘করোনা গোটা মানবজাতির জন্য ভীতির কারণ হলেও আওয়ামী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে ছিল আনন্দবার্তা। তারা রাজনীতি করছেন দুর্নীতির কাছে নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদনের জন্য। আর উন্নয়ন মানে তাদের পকেটের উন্নয়ন।’

বুধবার(১৩ এপ্রিল)দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার নেই বলেই দুর্নীতি আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, তাদের কিছু ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হরিলুটে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়েছে তারা।

৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শ্লোগান ছিল-সোনার বাংলা শ্মশান কেন ? আর এখন জনগণ বলে-“সোনার বাংলা নরক কেন ?” কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই শোষণ, লুন্ঠন, অবিচার, রাজনৈতিক হত্যা আর উৎপীড়নে দেশে ভয়াবহ কলঙ্ক রচনা করে। আপনারা জানেন, করোনা মহামারীতে যখন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে আর শত শত কোটি মানুষ ছিল মৃত্যু ভয়ে ভীত-সেই ভয়ানক পরিস্থিতিও নিশিরাতের সরকারের নেতা মন্ত্রীদের দুর্নীতি থেকে সরাতে পারেনি।

দেশের দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে তিতিবিরক্ত, বিব্রত জনগণের সামনে প্রতিদিন ওবায়দুল কাদের আর হাসান মাহমুদদের অর্থহীন কথাবার্তা জনগণের কাছে ‘মিষ্টি কুমড়া বেগুনি’র মতোই বিস্বাদ মনে হয় বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার আপনারা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্ট দেখেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের ভ্যাকসিন ক্রয় ও ব্যবস্থাপনায় ২৩ হাজার কোটি টাকার গরমিল রয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিন ক্রয় এবং ব্যবস্থাপনার নামে নিশিরাতের সরকার রাষ্ট্রের তথা জনগণের ২৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। প্রাক্কলিত ব্যয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রদত্ত হিসাবের অর্ধেকেরও কম। এছাড়াও ১০.১% নাগরিক টিকার জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে পছন্দ অনুযায়ী টিকা প্রদান করা হয়েছে এবং টিকা না নিয়েও টাকার বিনিময়ে প্রবাসীরা টিকা সনদ সংগ্রহ করেছেন।

রিজভী বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি সেক্টরে পিলে চমকানো বড় বড় দুর্নীতির খবর বেরুলেও আজ পর্যন্ত কোনো দুর্নীতির বিচার হয়নি। বরং দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের বাঁচানো এই সরকারের দুটি বিরল গুন। এরা দুর্নীতিকে জায়েজ করতে জাতীয় সংসদে পর্যন্ত দায়মুক্তির আইন পাশ করা হয়। ২০২১ সালের বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া, দুর্নীতির দায়মুক্তি এবং বিচারহীনতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই করোনার টিকা নিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। কেবল টিকা নয়, গত দুই বছরে করোনা মহামারীকালের প্রাত্যহিক সংবাদপত্রের পাতা ঠাসা ছিল  স্বাস্থ্যখাতের নিয়োগ, ক্রয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগুনতি অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ কেলেংকারি ও অব্যবস্থাপনার সংবাদে। সত্য সংবাদ প্রকাশের জন্য একজন সাংবাদিককে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তারা কোভিড-১৯ রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক তথ্য গণমাধ্যমের কাছে আদান প্রদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

জাতীয় সংসদে একাধিকবার কোন কোন সংসদ সদস্য  টিকার দাম জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ননডিসক্লোজার’ চুক্তির কারণে টিকার দাম প্রকাশ করা যাবে না। আবার তিনি টিকা নিয়ে একেক সময় একেকটা বিভ্রান্তিকর কথা বলে মানুষকে বেকুব বানানোর চেষ্টা করেছেন। গত ১০ মার্চ রাজধানীর জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে কিডনি দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনার টিকা কেনা ও টিকাদান কার্যক্রম মিলে সরকারের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

“অপরদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া গত কয়েক মাসে একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, টিকা কেনায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এটা থেকে যে কেউ অনুমান করতে পারেন ২৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির আসল রহস্য। চরমভাবে ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ ও গণক্ষোভ তৈরি হলেও সরকার কেন তাকে স্বপদে বহাল রেখেছে তা টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে উন্মোচন হলো। দেশের জনগণ এই ২৩ হাজার কোটি টাকা কারা লুটপাট করলো তার হিসাব চায়। বিরোধী দলের নেতাদের হয়রানির জন্য ওঁৎপেতে থাকা দুদককে বলবো তদন্ত করে ২৩ হাজার কোটি টাকার হিসাব বের করুন। এ সমস্ত নজীরবিহীন দুর্নীতির হিসাব জনগণকে দিতেই হবে।”

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘কেবল টিকা নয়, সুঁই কেনা থেকে শুরু করে কাঁথা বালিশ চাদর কিংবা হসপিটালের জানালার পর্দা কেনাকাটায় সরকারের লোকজন দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। সেখানে বিদেশ থেকে কঠিন শর্তে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা ঋণ এনে কথিত মেগা প্রকল্প করছে। এই প্রকল্পগুলো মুলতঃ লুটপাটের খনি।

তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা ধার-দেনা করে এনে নিশিরাতের সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে জনগণ ভয়াবহ উৎকন্ঠায়। বাংলাদেশে শ্রীল্ঙ্কা পরিস্থিতির ন্যায় সকল উপাদানই বিদ্যমান। বর্তমানে একটি শিশু ৯৮ হাজার টাকা ঋণ মাথায় জন্ম গ্রহণ করে, এখন সেটি বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গেছে। কারণ ইতোমধ্যে আরও ৬ বিলিয়ন ঋণ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডিও বলেছে, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বাংলাদেশকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ ২০২৩ সাল থেকে সকল ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হবে, তখন শ্রীলংকার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বাংলাদেশে।

রিজভী বলেন, ‘রেমিটেন্স নির্ভর অর্থনীতির উপর ভর করে নিশিরাতের সরকারের নেতা মন্ত্রীরা প্রতিদিনই দাবি করে বলছেন, বাংলাদেশে কখনোই শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি হবেনা। যারা পবিত্র রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা, যারা বেগুনের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে বেগুনি খাবার নির্দেশ দেয়। গতকাল লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং স্থানীয় সরপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, তিনি নিজেও ফেন্সিডিল খেয়েছেন, তার ছেলেরাও ফেনসিডিল খায়।

“সুতরাং দেশে ফেনসিডিল আমদানি করার জন্য নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এই নেতা। এই হলো ‘টপ টু বটম’ আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীদের অবস্থা। এই সমস্ত বক্তব্যে প্রমাণিত হয়-বাংলাদেশে এখন জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। সুতরাং এই আওয়ামী লীগের হাতে দেশ এবং জনগণ নিরাপদ কিনা এ প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। যে দলের নেতারা রাজস্ব ব্যয় বাড়াতে ফেন্সিডিল আমদানির সুপারিশ করে, এই সরকারের লোকজনের কথা শুনলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হতে হয়। মনে হয় আমরা সত্যিকার রাক্ষস-ক্ষোক্কসের দেশে বাস করছি।”

তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ নিয়ে শেখ হাসিনা শত শত মেগাপ্রকল্প খুলেছে। সবগুলোই হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। বলা যায়-পুরো বাংলাদেশ এখন বিদেশিদের ঋণের জালে বন্দী। ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বও বন্দী। এরপর মেগাদুনীতি, অর্থপাচার ও মূল্যস্ফিতিতে শ্রীলংকার চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ। এটি রীতিমতো উদ্বেগ, ভয় ও বিপদের কারণ হতে পারে। সরকার এখন শুধু চাপার জোরে টিকে আছে। যে কোনো সময় বায়বীয় অর্থনীতি ধসে পড়তে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম,যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন,স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com