`হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নামে চলছে লুটপাট’

0

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের নামে সরকারি টাকা লুটপাট হচ্ছে। প্রতি বছর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যারা কাজ বাস্তবায়নের সাথে যুক্ত তাদের মধ্যে। সরকারি টাকা লুটের নতুন সেক্টর হিসেবে তারা হাওরকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন।

হাওর অ্যাডভোকেসী প্লাটফর্ম (হ্যাপ) নামে সংগঠনটি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। ‘হাওরে বাঁধ বিপর্যয়’ শিরোনামে সুনামগঞ্জ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পাবলিক লাইব্রেরির হলরুমে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।

এ সময় হাওরের নানা সংকট নিয়ে কথা বলেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান, সুনামগঞ্জ হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হ্যাপের সদস্য ইয়াহিয়া সাজ্জাদ, সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা নির্মল ভট্টাচার্য।

হাওর নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনের প্রতিনিধিরা দুই দিন সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি হাওর ও বাঁধ ঘুরে সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে হাওরের বর্তমান পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তারা বলেন, এক সময় হাওরে ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হতো। কিন্তু ২০১৭ সালে ফসলডুবির পর ঠিকাদারি প্রথা বাদ দিয়ে স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। এই পদ্ধতিটি এখন পর্যন্ত ভালো। প্রথম দুয়েক বছর ভালোই চলছিল। কিন্তু এখন এটিকে নিষ্ক্রিয় করা ও বিতর্কিত করার একটা ষড়যন্ত্র চলছে। এ কারণে কমিটিতে নামে-বেনামে স্থানীয় রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ঢুকে পড়েন। তারা এসব পিআইসি নিজেদের কবজায় নিয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন।

তারা আরো বলেন, সরকারি টাকা লুটপাট হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগ আছে। এ কারণেই বাঁধের কাজ হয় দায়সারা, সময় মতো কাজ শুরু ও শেষ করা যায় না। এবারও দেখা গেছে, বাঁধনির্মাণ যেমন যথাযথভাবে হয়নি, তেমনি রক্ষনাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্বটিও ঠিকমতো হয়নি। এখন পাহাড়ি ঢল আসায় দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। একপক্ষ আরেকপক্ষকে দোষারোপ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসাবে বলা হয়, হাওর এলাকার নদ-নদী খনন জরুরি। বাঁধ নির্মাণে পিআইসি পদ্ধতি বাদ দেয়া যাবে না। তবে কাজকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে পিআইসির সংস্কার করতে হবে। কাজ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কাজ অবশ্যই যথা সময়ে শুরু এবং শেষ করতে হবে। এবার যারা বাঁধের অনিয়মের সাথে যুক্ত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুনামগঞ্জে এবার হাওরের ফসল রক্ষায় ৭২৭টি প্রকল্পে ১২২ কোটি টাকার বাঁধের কাজ হয়েছে। তবে এবারও কাজ সময় মতো শেষ হয়নি। গত ৩০ মার্চ থেকে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জি থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার সব হাওরের বোরো ফসল।

২ এপ্রিল প্রথমে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়। এরপর একে একে ছোট-বড় আরো ১০টি হাওরের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলার বড় বড় হাওরগুলোর ফসল এখনো ক্ষতি হয়নি।

জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এবার সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ টন। ঢলে জেলার বিভিন্ন হাওরে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে দুই হাজার ৬০০ হেক্টর।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com