মেয়ে মেডিক্যালে চান্স পাওয়ায় চিন্তিত ভ্যানচালক বাবা
নিজের জমি নেই। ভ্যান চালিয়ে তিন সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নে এগিয়ে চলেছেন ভ্যানচালক বাবা আফতাবর রহমান।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামের আফতাবর রহমানের মেয়ে আল্পনা আকতার এবার মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আফতাবের একমাত্র ছেলে পড়ালেখা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
মঙ্গলবার মেডিক্যাল কলেজের ভর্তির ফলাফল প্রকাশিত হলে তার এই সুযোগের কথা প্রকাশ পায়। তবে এ খবরে চিন্তিত ভ্যানচালক বাবা আফতাব রহমান।
আফতাবর রহমানের বাড়ী ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামে। ভিটেমাটি আর ভ্যানছাড়া তার আর কোনো সম্পদ নেই। একমাত্র ছেলে মুন্না আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
এদিকে মঙ্গলবার মেয়ে আলপনা আক্তারের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ফলাফল প্রকাশিত হয়। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হয়েছে তার। এছাড়াও বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করেছেন আর ছোট মেয়ে পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকে। একমাত্র ছেলেকে এতদিন পড়ালেখার খরচ নিয়মিত দিয়ে আসছেন ভ্যান চালিয়ে। এবার মেয়ে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগের খবরে খরচের চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
তিনি সংসারের খরচ যোগাতে প্রতিদিন রিকশা চালানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কথার ফাকে আফতাবর রহমান জানান, ভ্যান চালিয়ে ছেলেকে ঢাবিতে, মেয়ে দু’টোকে পড়াচ্ছি।
ছেলে মুন্না আলীর ঢাবিতে ভর্তির সময় ২৫ শতক আবাদী জমির মধ্যে পাঁচ শতক জমি বিক্রি করে ভর্তির খরচ বহন করেছি। পরবর্তীতে তার পড়ালেখা খরচ যোগাতে গিয়ে অবশিষ্ট ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়াও প্রতিমাসে পড়ালেখা তিনি থেকে চার হাজার টাকা ঢাকায় ছেলেকে পাঠানো, অন্য দুই মেয়ের পড়ালেখা খরচ এবং সাংসারিক ব্যয় বহনের একমাত্র মাধ্যম আমার ভ্যান গাড়িটি। একদিন ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের না হলে সংসারে চুলায় তার হাড়ি উঠেনা।
তিনি আরো জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুই সন্তান পড়াশোনার সময় শিক্ষাবৃত্তি পায় ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে। এ শিক্ষাবৃত্তির টাকা তার পরিবারের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করেছে। মেয়েকে ভর্তি করানোর টাকা যোগাড় করতে ইতোমধ্যে তিনি তার নিকট আত্মীয়দের সাথে কথা বলছেন। তারা ভর্তির টাকা দেয়ার আশ্বাস দেয়ায় তিনি অনেকটা চিন্তামুক্ত। কিন্তু চিন্তা হলো পরবর্তীতে মাসে মাসে যে খরচ দিতে হবে তা আসবে কোথা থেকে। কারণ রিকশা ভ্যানের আজকাল দুর্দিন চলছে। আগে ভ্যান চালিয়ে আয় বেশি হলেও থ্রি-হুইলার ও অটোচার্জারের ভিড়ে ভ্যান গাড়িতে যাত্রী পাওয়া যায় না বললেই চলে। এছাড়াও বাজারে নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে।
ভ্যানচালকের স্ত্রী মাজেদা খাতুন জানান, আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু থাকা পর্যন্ত সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যাবো। মানবিক কারণে যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াতে চান, তাহলে আমরা আপত্তি করব না।
সদ্য ময়মনসিংহ মেডিক্যালে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী আলপনা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে।
আলপনা আক্তার বলেন, বাবা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছেন। চিকিৎসক হয়ে বাবা-মাসহ অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বাবার স্বপ্ন পুরণে সকলের নিকট দোয়া চান তিনি।