দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ
রাজধানীর ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ। যানজট, চাঁদাবাজি, র্ছিনতাই, গ্যাস সংকট, দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি, সড়কে মৃত্যু, খুন, ডায়রিয়া-এমন নানা ভয়াবহ সংকট নিয়ে চলছে নগরবাসীর জীবন। কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের জীবন ওষ্ঠাগত। দুর্বিষহ এমন জীবনে এই মুহূর্তে কোথাও আশার আলো দেখছেন না তারা। সবার একটাই প্রশ্ন-যাবে কোথায় মানুষ।
এতদিন ঘরের বাইরে নানা ভোগান্তি পেরিয়ে বাসায় ফিরে অন্তত ঠিকমতো রান্নাটা করতে পারত রাজধানীর মানুষ। কিন্তু রমজান শুরুর পর থেকে ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। রোজা রেখে বাসায় পছন্দের ইফতারিও তৈরি করতে পারছেন না অনেকে। কোথাও নির্দিষ্ট সময়ে গ্যাস এলেও অনেক এলাকায় চুলাই জ্বলছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাইরে থেকে খাবার কেনা অনেকটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের’ মতো। বাসায় যখন গ্যাস নেই ঠিক সেই সময়ে আসে আরেক দুঃসংবাদ। ফের বাড়ানো হয়েছে এলপিজির দাম। এ নিয়ে চার মাসে অন্তত এর দাম বাড়ল চারবার।
রমজান শুরুর আগে থেকেই দ্রব্যমূল্য দফায় দফায় বাড়তে থাকে। তেলসহ কিছু পণ্য বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অনেকে ছুটছেন টিসিবির ট্রাকের দিকে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে চারদিকে যখন হইচই এ সময় শুরু হয় রমজান। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের নজর পড়ে রমজানকেন্দ্রিক পণ্যের দিকে। ইফতারি তৈরির প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। কয়েকদিনের ব্যবধানে বেগুনের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে একশ টাকায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে ইফতারি বাজারেও। পিয়াজু, বেগুনি, ছোলা থেকে শুরু করে হালিম সব আইটেমের দাম চড়া। ইফতারিতে ফলমূল সবারই প্রিয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তা হয়ে উঠেছে দুষ্প্রাপ্য। রমজানকে কেন্দ্র করে সব ফলের দাম বেড়েছে। টেনে চালানো সংসারে ইফতার পণ্যের অতিরিক্ত খরচে দিশেহারা মানুষ।
জীবন সংসার চালাতে দিনের শুরুতেই মানুষকে পড়তে হচ্ছে সীমাহীন যন্ত্রণায়। রাজধানীর যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে ঘর থেকে বের হলেই তা শুরু। যানজটে অলিগলি, প্রধান সড়ক সব জায়গায় স্থবিরতা। তীব্র গরমে এমন অসহনীয় যানজটে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এক প্রকার যুদ্ধক্ষেত্র জয় করে তাদের যেতে হয় কর্মক্ষেত্রে। এ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না রাজধানীবাসী।
রাজধানীবাসীর জন্য আরেকটি আতঙ্কের নাম সড়ক দুর্ঘটনা। ঘর থেকে বেরোনোর পর আবার সুস্থ শরীরে বাসায় ফিরতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নই সবার মধ্যে। স্কুলগামী ছেলেমেয়ের হাত থেকে ঘাতকরা কখনো মা, কখনো বাবাকে কেড়ে নিচ্ছে। কেউ নিরাপদ নয়। রাজধানীতে মাসে গড়ে ১৫ থেকে ১৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে ঘাতক পরিবহণ।
কোথাও নিরাপদ নয় রাজধানীবাসী। সড়কে ওতপেতে থাকেন ভয়ানক ছিনতাইচক্র। জীবন সংসার চালাতে ভোরে বাসা থেকে বের হয়ে অনেকেই পড়ছেন ছিনতাইয়ের কবলে। সবকিছু কেড়ে নিচ্ছেন তারা। অনেককে আবার দিতে হচ্ছে জীবনও। শুধু ছিনতাইকারী নয়, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষ। গত ছয় মাসে রাজধানীতে ২০-এর অধিক মানুষ খুন হয়েছেন।
সংকট যেন মানুষের পিছু ছাড়ছেই না। করোনার মহামারি নিয়ন্ত্রণে এলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া। প্রতিদিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে ভয়ের সৃষ্টি করেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে চিন্তিত প্রতিটি পরিবার।