জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনেই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে: বিএনপি

0
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতারা।

 

স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যখন স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করার দুঃসাধ্য কাজটি করতে এগিয়ে এসেছিলেন ৩৬ বছরের তরুণ যুবক মেজর জিয়াউর রহমানই। দেশের টানে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জীবন বাজি রেখে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে আজকে দেশের ইতিহাস ভিন্ন হতে পারতো। তাঁর ঘোষণা শুনেই শুনেই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করেছিল। মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস প্রমাণ করতে আদালতের রায়ের প্রয়োজন হয় না। এই ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধে যারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন ও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের অসংখ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে, এই ইতিহাস মানুষের হৃদয়ে গ্রোথিত হয়ে আছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া’র লেখা বইয়েও সেটির উল্লেখ আছে।

 

গতকাল (৩১ মার্চ ২০২২) বৃহস্পতিবার, বিকেলে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

 

বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি, আজকে যারা ক্ষমতায়, তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য ইতিহাসকে বিকৃত করছে। দেশের জনগণ ও নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ইতিহাস বিকৃত ও জনগণকে বিভ্রান্ত কেন করছে? মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ইতিহাস যদি আজকের প্রজন্ম জানে, রাজনৈতিক ইতিহাস যদি তারা জানে আজকে যারা ক্ষমতায় শুধুমাত্র চাপাবাজি করে তাদের রাজনীতি বাংলাদেশে থাকবে না, টিকবে না।

 

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, এই আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসাথে চলে না। এই আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতন্ত্র হত্যার জন্য দায়ি। এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচন হয়নি, দেশে এবং বিদেশে সবাই জানে। তাই শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না, অংশগ্রহন মূলক হবে না। তাই আমরা বলেছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। সেটা করতে হলে এই সরকারকে হটাতে হবে। এই শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের মানুষের কোনো শান্তি নেই। দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ। এই সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষ দ্রুত মুক্তি চায়।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগকে হটিয়ে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ লক্ষ্য পূরণের কোনো বিকল্প নেই।

 

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কোনো স্বৈরাচার আপসে সরে যায় নাই। এ জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে। তাই সংগ্রাম করে এই শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাতে হবে। বিদায় করতে হবে। তাকে বিদায় করতে পারলে এ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারলে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা পূর্ণাঙ্গ মুক্ত করতে পারব না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব না।

 

স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা খুড়িয়ে খুড়িয়ে অনেক পিছনে চলে গেছি উল্লেখ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বাস্তবতা বলতে হয় না। আমরা বার বার বলছি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কখন বলি, যখন আওয়ামী লীগ বলে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। আওয়ামী লীগের কথা একটাই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। জিয়াউর রহমান শুধু ঘোষণাই দেননি। তিনি অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের মতো ভারতে বসে যুদ্ধ পরিচালনা করেননি। তিনি বাংলাদেশের মাটিতে সিলেটে বসে নিজ হাতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। এটা আওয়ামী লীগের সহ্য হয়না।

 

তিনি আরো বলেন, সেদিন শুনলাম জিয়াকে ধরে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করানো হয়েছিল। বাধ্য হয়ে স্বীকার করতে হল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেছে। আমরা বলি ঘোষনা, আওয়ামী লীগ বলে পাঠ করেছিল। কারা তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল? তা কি পাকিস্তানি নাকি বাংলাদেশী লোক। যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাদের মুখে কুলুপ দেয়া ছিল? তা সেদিন ঘোষনা দিলেন না কেন? এতেই প্রমানিত হয় জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন।

 

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি? একদিকে চলছে গুম, খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, দু:শাসন, ব্যাংক লুট, বিদেশে টাকা পাচার। অন্যদিকে, আমরা যার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি সেই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, আমাদের নেতা তারেক রহমান মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার মাইল দূরে রাখা হয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। কেউ কারাগারে বন্দি, কেউ আদালতের দরজায় দরজায় ঘুরছে। এই হচ্ছে দেশের অবস্থা।

 

আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘দেশের মানুষ আজ বিক্ষুব্ধ। তারা এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আর সে জন্য এই সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

 

এসময় নানা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি নেতারা বলেন, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।। অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান তারা। এসময় বিএনপি নেতারা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, সরকার ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে গেছে, যে কারণে সাধারণ মানুষের কষ্টকে আমলে নিচ্ছে না তারা। এসময়, দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামার আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা।
তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com