হঠাৎ ব্যাংকে টাকার সঙ্কট, হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যাংকারদের
ব্যাংকিং খাতে হঠাৎ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মাসের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে গতকাল ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) সংরক্ষণ করতে হিমশিম খেতে হয় ব্যাংকারদের। জরিমানা এড়াতে ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেটে ছোটাছুটি করতে হয়েছে। সুযোগটি কাজে লাগায় মার্কেট প্লেয়াররা। তারা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সুদহার এক লাফে দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে দেয়। তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাত পেতেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে এক হাজার ৩০ কোটি টাকার জোগান দিয়েছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমানত প্রবাহ কয়েক মাস ধরে কমে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মানুষের আয় কমে গেছে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সঞ্চয় করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ; বরং যেটুকু সঞ্চয় ছিল বর্ধিত ব্যয় মেটাতে তা ভেঙে ফেলছে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকে কমে যাচ্ছে আমানত প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) আমানতের প্রবৃদ্ধি যেখানে ছিল প্রায় সাড়ে ৪৩ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা না বেড়ে বরং কমে গেছে ৫১ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত অর্থবছরের সাত মাসে ব্যাংকিং খাতে আমানত সংগ্রহ হয়েছিল যেখানে এক লাখ পাঁচ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে হয়েছে ৫০ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা।
আমানত প্রবাহ কমে যাওয়ার বিপরীতে ব্যাংকে বিনিয়োগ চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই এখন তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে কিছু কিছু ব্যাংকের দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোসহ সিআরআর সংরক্ষণের জন্য ধার করতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে তার পুরোটাই বিনিয়োগ করতে পারে না। দৈনন্দিন লেনদেনসহ আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বাধ্যতামূলক আমানতের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে নগদে সংরক্ষণ করতে হয়, যা ব্যাংকিং ভাষায় সিআরআর বলে। বর্তমানে এ সিআরআর দৈনন্দিন ভিত্তিতে সাড়ে ৩ শতাংশ এবং ১৫ দিন অন্তে ৪ শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকগুলোর সিআরআর ঘাটতি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হয়, যা ব্যাংক কোম্পানি আইনে মওকুফের কোনো সুযোগ নেই। ব্যাংকগুলো তাই জরিমানা এড়াতে ধার করে হলেও নগদ অর্থের সংস্থান করে থাকে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ সুযোগটিই কাজে লাগায় অর্থবাজারের কিছু প্লেয়ার। তারা নগদ টাকা নিয়ে আগেই বসে থাকেন। সুযোগ আসলেই তা স্বল্প সময়ের জন্য বেশি সুদ আদায় করে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২৩ মার্চেও কলমানি মার্কেট থেকে ১০০ টাকা ধার করতে ২ টাকা ৩৯ পয়সা ব্যয় করতে হয়েছে। গতকাল তা এক লাফে বেড়ে কোনো কোনো ব্যাংক সাড়ে ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করেছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে। এতে অনেকেরই তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যায়। এ তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে অনেক ব্যাংক তাদের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ তহবিল সংস্থানের আওতায় সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে প্রায় এক হাজার ৩০ কোটি টাকার নগদ অর্থের জোগান দিয়েছে। এ জন্য প্রতি ১০০ টাকায় পৌনে ৫ শতাংশ সুদ গুনতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ সঙ্কটে সামনে অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবাহ কমে যাচ্ছে। বাড়ছে বিনিয়োগ চাহিদা। এ পরিস্থিতিতে আমানত প্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।